বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত সংকটের মধ্যে একে একে সামনে আসছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক সমস্যাগুলি। এমনই একটি উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরে, যেখানে সড়ক নির্মাণের জন্য ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর, কৃষকদের দাবি এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপের খবর উঠে এসেছে। আসুন, এক নজরে জানি এই পরিস্থিতির বিশদ বিশ্লেষণ। সড়ক নির্মাণে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি
ফসলি জমির ক্ষতি এবং ক্ষতিপূরণের দাবি
শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরে সড়ক নির্মাণের জন্য ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে, যা কৃষকদের কাছে এক বড় বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, সড়ক নির্মাণের কারণে হাজারো বিঘা জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা দেশের খাদ্য উৎপাদন ও কৃষকের জীবিকা উপার্জনে প্রভাব ফেলবে। এই ক্ষতির জন্য তারা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য যে, হাওরের বেশ কিছু কৃষক জমি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, সরকার একদিকে সড়ক নির্মাণ করছে, অন্যদিকে তাদের জীবিকা ও জমির ক্ষতি হচ্ছে। কৃষক ইউসুফ আলী জানান, তাঁর ৩৩ শতক জমি সড়ক নির্মাণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জমির ধানসহ মাটি কেটে ফেলা হয়েছে। একে একে, এই প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা তাঁদের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন, কারণ তাদের জমি খরচ ও জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
সরকারি পদক্ষেপ ও মতবিনিময়:
এই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রেজওয়ানুর রহমান এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে পরিদর্শন করেন। এই পরিদর্শনে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ এবং জমির সমস্যা সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়। সচিব মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন এবং কৃষকদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
কৃষকরা সড়কের কাজের ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন, যার ফলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে এবং হাওরের নৌ-চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে। এই বিষয়ে সচিব জানান, তিনি স্থানীয়দের কথা শুনে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। সড়ক নির্মাণে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি
সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের বিস্তারিত
এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সড়ক নির্মাণের কাজটি ঢাকা ভিত্তিক জেবি ইনোভেশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, যার ফলে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে এবং প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সরকারি কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই, তবে মাটি কেনার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। সড়ক নির্মাণের জন্য মাটি স্থানীয় এলাকায় থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে, যেটি কৃষকদের জন্য এক ধরনের অতিরিক্ত ক্ষতি।
কৃষকদের মর্মবেদনা এবং ভবিষ্যতের ভাবনা
ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা শুধু কৃষকদের জন্য এক বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করছে, তা নয়, এটি স্থানীয় পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। হাওরের মতো এলাকার কৃষকরা শুধু যে ধান উৎপাদন করেন, তা নয়, বর্ষাকালে তাদের জীবিকা মূলত মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। সড়ক নির্মাণের ফলে হাওরের জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে এবং মাছ ধরার কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে।
এছাড়া, সড়ক নির্মাণের পর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে কৃষকরা তাদের ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাবে না, যা তাদের জীবিকার এক বড় ক্ষতি।
উপসংহার:
ফসলি জমি নষ্ট হওয়া এবং কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দাবির বিষয়টি সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে এক বড় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। যদিও সরকার কৃষকদের ক্ষতি কাটানোর চেষ্টা করছে, তবে এই সমস্যার সমাধান কতটা হবে, তা প্রশ্নের মুখে রয়েছে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে কৃষকরা তাদের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন এবং পরিবেশের ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হয়।
আমাদের দায়িত্ব
আজকের এই সংকটের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হলে সমগ্র জাতিকে সচেতন হতে হবে। কৃষকরা আমাদের খাদ্য সরবরাহের মূল ভিত্তি, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা পরিবেশ ও জীবনধারণের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি।
Call to Action (CTA):
আপনি কি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল? অথবা আপনি কি মনে করেন, এই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিবেশের উপর কী প্রভাব ফেলবে? নিচে মন্তব্যে আপনার মতামত জানান এবং এই পোস্টটি শেয়ার করুন যাতে সবাই সচেতন হয়।
#কৃষক #ফসলি_জমি #নদী_ভাঙন #পরিবেশ #জলবায়ু_পরিবর্তন #খাদ্য_নিরাপত্তা #সুনামগঞ্জ #শান্তিগঞ্জ #দুর্যোগ_ব্যবস্থাপনা