থাইল্যান্ডের মতো ভূমিকম্পে ঢাকার কী পরিণতি হতে পারে?

গত শুক্রবার থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহর ভয়াবহ ভূমিকম্পের আঘাতে কেঁপে উঠেছিল, যার উৎপত্তি ছিল মিয়ানমারের মান্দালয়ে। ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭.৭ মাত্রা, যা ব্যাংককের বিভিন্ন বহুতল ভবনকে ধ্বংস করে ফেলেছিল। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরেও এর প্রভাব অনুভূত হয়েছিল। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে—ঢাকা, একটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং অপরিকল্পিত শহর, থাইল্যান্ডের মতো ভয়াবহ ভূমিকম্পে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবে? এই পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, এবং আশঙ্কার সেই চিত্র তুলে ধরব, যা আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সতর্কবার্তা। ভূমিকম্পে ঢাকার পরিণতি

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা ও ঢাকার সংকট

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে যে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ভবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, সেটি ছিল শুধু একটি উদাহরণ। গত কয়েক বছরে ভূমিকম্প এবং জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষ করে এই অঞ্চলে, আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছে। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক এবং মিয়ানমারের শহরগুলোর মতো ঢাকায় একটি বড় ভূমিকম্প হলে কী পরিণতি ঘটতে পারে?

ঢাকা, বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর, যেখানে প্রায় দুই কোটি মানুষ বসবাস করেন। এখানকার অবকাঠামো, পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রায় সবই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। কিছু গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যাচ্ছে যে, একটি বড় ভূমিকম্পে ঢাকার ৪০% ভবনই ধসে পড়বে এবং বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

ভূমিকম্প-বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশে ভূমিকম্পের প্রভাব বাড়ছে, বিশেষত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব, সিলেট, কক্সবাজার, এবং ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। পরবর্তী সময়ে বড় কোনো ভূমিকম্প হলে তার প্রভাব ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এর বিপরীতে, ঢাকায় অবকাঠামোগত দুর্বলতা, বিশেষত বহুতল ভবনগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে, বিপদের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

একটি বড় ভূমিকম্পে ঢাকা বিস্ফোরণের শহর হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এখানে পানির লাইন, গ্যাস সিস্টেম, এবং বিদ্যুৎ সংযোগের নেটওয়ার্ক এতই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে যে, এমন একটি পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ হবে না।

ঢাকা: ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত নয়

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) একটি গবেষণার মাধ্যমে জানান যে, ১৮৮৫ সালে বাংলাদেশে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের মতে, এমন ভূমিকম্প ঢাকায় হলে কমপক্ষে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ভবন ধসে পড়বে এবং লাখ লাখ মানুষ নিহত হবে। ভূমিকম্পে ঢাকার পরিণতি

অথচ, ঢাকা শহরের ভবনগুলো খুবই দুর্বল, এবং সেগুলো ভূমিকম্পের জন্য যথাযথভাবে নির্মিত নয়। বহু ভবন সেমি-অফিসিয়াল এবং অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত: মুজিবুর রহমানের আলোচনায়

প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের মতে, ঢাকায় ভূমিকম্পের ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেক কঠিন হবে, কারণ শহরের অলিগলি এবং সরু রাস্তার কারণে জরুরি পরিষেবা পৌঁছানো অসম্ভব হতে পারে। শুধু তাই নয়, ঢাকা শহরের নির্মাণ কাজের নিয়মনীতি না মানা এবং দুর্নীতির কারণে ভবনগুলোর কাঠামোগত শক্তি বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘যতদিন না আমরা আমাদের অবকাঠামোকে ভূমিকম্প-সহনীয় অবস্থায় আনতে পারি, ততদিন পর্যন্ত ঢাকা শহরের নিরাপত্তা বড় ঝুঁকিতে থাকবে।’

পরিকল্পনা ছাড়া উন্নয়ন: একটি বিপদজনক পথ

ঢাকাতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ভবন এবং ত্রুটিপূর্ণ অবকাঠামো জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া নগরায়ণ এবং নির্মাণ কাঠামো তৈরি করা একটি বড় ভুল, যা আমাদের আগামীর জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

যত দ্রুত সম্ভব, সরকারের উচিত একটি ব্যাপক ভূমিকম্প-সহনশীল নগরায়ণ নীতি গ্রহণ করা, যা শুধু ঢাকা নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য শহরগুলোকেও নিরাপদ রাখতে সহায়ক হবে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা কী পর্যায়ে আছে এই সমস্যাগুলো সমাধানে? ঢাকার অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূর করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরগুলোর পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং ভবনগুলোর কাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। যদি না হয়, তবে ভবিষ্যতে বড় কোনো ভূমিকম্পের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা কল্পনা করাও কঠিন।

আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?

বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন তুরস্ক এবং সিরিয়া তাদের ভূমিকম্পের ভয়াবহতা দেখিয়েছে, বাংলাদেশে যদি এমন ঘটনা ঘটে, তবে তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সেটা আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। ঢাকা শহরকে সুরক্ষিত রাখতে এবং ভবিষ্যৎ ভূমিকম্পের আঘাত থেকে রক্ষা পেতে কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিকল্পিত নগরায়নই হতে পারে একমাত্র সমাধান।

Call-to-Action (CTA):

এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনার মতামত কী? আপনি কি মনে করেন, ঢাকাকে ভূমিকম্প-সহনশীল করা সম্ভব? কমেন্টে আমাদের জানান এবং এই পোস্টটি শেয়ার করুন যাতে আরও মানুষ সচেতন হতে পারে।