30.9 C
Bangladesh
সোমবার, জুন ২৩, ২০২৫
spot_img

৮২৭ কোটি টাকা খরচ করেও মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ ঢাকা

ঢাকা শহরের মশার উপদ্রব আমাদের জন্য বহুদিন ধরে একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর দুই সিটি করপোরেশন মশা নিধনের জন্য বিশাল অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ করলেও, সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার বা ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মশা নিধন কার্যক্রমের প্রতি বছরের বাজেট আরও বাড়ছে, কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষ মশার কামড়ে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে ডেঙ্গু প্রভৃতির মহামারি সারা শহরেই আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ ঢাকা

এই পোস্টের উদ্দেশ্য হলো, মশা নিধনের জন্য বরাদ্দ করা বিপুল বাজেটের কার্যকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এবং এর পিছনে থাকা ব্যর্থতার কারণ এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে জানানো।

ঢাকার দুই সিটির মশা নিধনে বাজেট ও ফলাফল

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের দুই সিটি করপোরেশন প্রতি বছরই বিশাল অঙ্কের বাজেট মশক নিধনের জন্য বরাদ্দ করে। কিন্তু সেই বাজেটের সঠিক ব্যবহার, কার্যকরী পদক্ষেপ এবং সফলতা নিয়ে কার্যত কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। গত ১০ বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিধনে প্রায় ৮২৭ কোটি টাকা খরচ করেছে। সেই অর্থের মধ্যে কীটনাশক ক্রয়, বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ, মাঠ পর্যায়ে কাজ করা কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ, তেলাপিয়া মাছ ও গাপ্পি মাছ ছাড়ানোর মত বিভিন্ন পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বাস্তবে ফলাফল যে তেমন সাড়া দিচ্ছে না, তা স্পষ্ট। মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ ঢাকা

বিগত পদক্ষেপ ও তাদের কার্যকারিতা

ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশন যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, সেগুলির অধিকাংশই প্রশ্নবিদ্ধ। কীটনাশক ছিটানো, ড্রেন ও জলাশয়ে মাছ, ব্যাঙ ছাড়ানোর মত পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, সেগুলোর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। গবেষকরা বলছেন, মাছ ও ব্যাঙের মাধ্যমে মশা নিধন কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। অনেক ক্ষেত্রে, গাপ্পি মাছ ছাড়া হলেও সেগুলি মারা যায় কারণ সঠিক মনিটরিংয়ের অভাব থাকে।

এছাড়া, ফগিং সিস্টেম (ধোঁয়া দিয়ে মশা মারার পদ্ধতি) বর্তমান সময়ে কার্যকর নয়। সারা পৃথিবীজুড়ে এখন এই পদ্ধতি পরিহার করা হচ্ছে, কারণ এটি শুধু পরিবেশ দূষিত করে, তবে মশা মারে না।

মনিটরিংয়ের অভাব ও ব্যর্থতা

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মনিটরিংয়ের অভাব। যেকোনো উদ্যোগ সফল হতে হলে তা সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশন তাদের মশক নিধন কর্মীদের কার্যক্রমের উপর সঠিকভাবে নজরদারি না করে, বছরের পর বছর একই ব্যর্থতা অব্যাহত রেখেছে। কীটনাশক বা অন্যান্য উপকরণ যখন ব্যবহৃত হয়, তখন তার কার্যকারিতা পর্যালোচনা বা মূল্যায়ন করা হয় না, যার ফলে সেই পদক্ষেপগুলি অব্যাহতভাবে কার্যকরী হয় না।

এছাড়া, সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা (Integrated Mosquito Management) একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি, যা মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হতে পারে, কিন্তু সেটি ঢাকার সিটি করপোরেশনগুলোতে আদৌ প্রয়োগ করা হচ্ছে না।

ভবিষ্যতের জন্য পদক্ষেপ

ঢাকা শহরের মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষভাবে, কার্যক্রমগুলোর সঠিক মনিটরিং, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, এবং সঠিক পদ্ধতিতে কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনগুলির মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। মশক নিধনের জন্য শুধুমাত্র কিছু পদ্ধতি ব্যবহার না করে, বরং সম্পূর্ণ একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এছাড়া, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনকে একযোগভাবে কাজ করে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যেসব এলাকায় মশা বেশি, সেখানে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

শেষ কথা

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধন নিয়ে বড় অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ করলেও, সঠিক মনিটরিং এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপের অভাবে মশার উপদ্রব কাটাতে সক্ষম হচ্ছে না। এখন সময় এসেছে, সিটি করপোরেশনগুলোর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসকদের উচিত আরও কার্যকরী, সঠিক এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আসুন, আমরা সবাই এই সমস্যা সমাধানে সচেতন হই এবং সহযোগিতা করি।

Call-to-Action

এ বিষয়ে আপনার মতামত জানাতে নিচে কমেন্ট করুন এবং পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন! আপনার একে অপরের সাহায্য ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়!

#ঢাকার_মশার_উপদ্রব #মশক_নিধন #পরিবেশ #জলবায়ু #ডেঙ্গু #মশা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ