28.5 C
Bangladesh
সোমবার, জুন ২৩, ২০২৫
spot_img

সেন্ট মার্টিনে বিকল্প কর্মসংস্থান উদ্যোগ | রিজওয়ানা হাসানের পরিকল্পনা

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। যেখানে নীল জলরাশি আর সাদা বালুর সৌন্দর্যে বছরের পর বছর ভেসে এসেছে পর্যটকের ঢল। তবে সেই পর্যটনের ভারে আজ হুমকির মুখে দ্বীপটির পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। এই সংকট সমাধানে সরকার নতুন পথে হাঁটছে। সেন্ট মার্টিনে বিকল্প কর্মসংস্থান উদ্যোগ

পরিবেশ বাঁচাতে সীমিত পর্যটন

পর্যটনের চাপ কমাতে সরকার সেন্ট মার্টিনে পর্যটন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এতে যেন স্থানীয় জনগণের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান স্পষ্ট করে বলেছেন,

“দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করেই স্থানীয় জনগণের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই সিদ্ধান্ত এসেছে ১৩ এপ্রিল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক সভায়, যেখানে সেন্ট মার্টিনের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। সেন্ট মার্টিনে বিকল্প কর্মসংস্থান উদ্যোগ

বিকল্প কর্মসংস্থানে বড় পরিকল্পনা

সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, দ্বীপের মানুষের বিকল্প জীবিকার পথ সুসংহত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিতে থাকবে কৃষি, মৎস্য, ট্যুরিজম বোর্ড, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বন বিভাগ, জেলা প্রশাসন, ব্র্যাক ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা।

এই কমিটি সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে।

সমুদ্র ও কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ

সভায় জানানো হয়, স্থানীয়দের জন্য কিছু কার্যকর উদ্যোগ হাতে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  1. পরিবেশবান্ধব জাল ও আধুনিক মাছ ধরার প্রযুক্তি
  2. শুঁটকি ব্র্যান্ডিং ও বাজারজাতকরণে সহায়তা
  3. সি-উইড, মাশরুম, সবজি চাষে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা
  4. গবাদি পশু ও পোল্ট্রি খামার ব্যবস্থাপনা শেখানো

এই ধরনের উদ্যোগ দ্বীপবাসীকে শুধু জীবিকাই দেবে না, বরং পরিবেশ রক্ষায়ও সহায়ক হবে।

নারীদের ক্ষমতায়নে বিশেষ নজর

নারীদের জন্যও পরিকল্পনায় রয়েছে বেশ কিছু প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি।

সেলাই, নকশিকাঁথা, স্মারকসামগ্রী তৈরি, নারকেলের ছোবড়া দিয়ে দড়ি বানানো—এসব কৌশল শেখানো হবে স্থানীয় নারীদের। এর মাধ্যমে তাদের স্বনির্ভর করার পাশাপাশি বাজারে নতুন পরিবেশবান্ধব পণ্যের সরবরাহও নিশ্চিত হবে।

শিক্ষার্থী ও যুবকদের নিয়েও পরিকল্পনা

শিক্ষা সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয় যুবকদের পরিবেশ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে ট্যুর গাইড হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও থাকবে বৃক্ষরোপণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এবং রেস্টুরেন্টে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।

সেন্ট মার্টিনে সবজি চাষের সম্ভাবনা

দ্বীপের জমির ধরন অনুযায়ী সবজি উৎপাদনের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের উৎসাহিত করা হবে এই খাতে কাজ করতে, যাতে তারা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিকল্প আয়ের সুযোগ পায়।

দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য: মানুষ ও প্রকৃতির ভারসাম্য

এই সকল উদ্যোগের উদ্দেশ্য একটাই—পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। সেন্ট মার্টিনের মতো একটি পরিবেশসংবেদনশীল এলাকায় পর্যটনকে নিয়ন্ত্রিত রাখা ও বিকল্প অর্থনীতির সুযোগ তৈরি করাই এখন সময়ের দাবি।

সরকারের আন্তরিকতা ও বহুমাত্রিক সহযোগিতা

সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, কোস্ট গার্ড, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এই দ্বীপের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের রূপরেখা আরও সুসংহত হবে।

শেষ কথা

সেন্ট মার্টিন শুধু একটি পর্যটন দ্বীপ নয়—এটি আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পর্যটনের ভারে এই দ্বীপ যেন না ভেঙে পড়ে, সেজন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ বাস্তবায়ন জরুরি।

আসুন, সবাই মিলে পরিবেশ ও জীবিকা—দুইয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করি।

আপনার মতামত কী? পোস্টটি শেয়ার করুন, সচেতনতা ছড়ান।

সাবস্ক্রাইব করুন পরিবেশ ও জলবায়ু সংক্রান্ত আরও আপডেট পেতে।

#সেন্ট_মার্টিন #পরিবেশ #জলবায়ু #রিজওয়ানা_হাসান #কর্মসংস্থান #পর্যটন #সামুদ্রিক_দ্বীপ #দায়িত্বশীল_উন্নয়ন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ