28.1 C
Bangladesh
রবিবার, জুন ২২, ২০২৫
spot_img

কুতুবদিয়ার বেড়িবাঁধ সংকট: ৩৪ বছরে কেন হয়নি সমাধান?

কুতুবদিয়ার দীর্ঘদিনের বিপর্যয়

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া, বিশেষত কৈয়ারবিল ইউনিয়ন, এক ভয়াবহ স্মৃতি বহন করে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের। সে রাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে কুতুবদিয়া দ্বীপের পশ্চিমাংশ এবং পাশের আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের বিশাল এলাকা বিধ্বস্ত হয়ে যায়, হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং লক্ষাধিক ঘরবাড়ি, স্কুল, রাস্তা, হাসপাতাল—সব কিছুই বিলীন হয়ে যায়। তবে ৩৪ বছর পরেও কুতুবদিয়ার বাসিন্দারা একটি টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে এখনও সাগরের আগ্রাসনে ভুগছে। কুতুবদিয়ার বেড়িবাঁধ সংকট

প্রতিবছর, ২৯ এপ্রিলের দিনটি কুতুবদিয়াবাসীর কাছে শুধুমাত্র স্মৃতি নয়, একটি জীবন্ত দুঃখের চিহ্ন হয়ে দাঁড়ায়। বাড়ি-ঘর হারানোর বেদনা, স্বজনদের অকাল প্রয়াণ—এই দিনটি আর কখনও ভুলতে পারেনি তারা। প্রতিবছর মানববন্ধন, সমাবেশ, এবং নানা ধরনের আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাসিন্দারা তাদের দাবী জানিয়ে থাকেন—টেকসই বেড়িবাঁধ এবং উপকূলীয় জীবনের সুরক্ষা।

বাজারের ভাঙা বেড়িবাঁধ: অর্থ ব্যয় হলেও কাজ হয়নি

কুতুবদিয়ার বর্তমান বেড়িবাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য প্রতিবছর টাকা বরাদ্দ হলেও তার কার্যকর ফলাফল মেলেনি। গত তিন বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ করা হলেও ৭-৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে, যার ফলে দ্বীপের বাসিন্দারা প্রতি বছর ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েন। কুতুবদিয়ার বেড়িবাঁধ সংকট

দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৯৯১ সালের ২২ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় এবং ২৪ এপ্রিল থেকে ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে। ২৯ এপ্রিল রাতে এটি ২৫০ কিলোমিটার গতিবেগে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে। এর প্রভাবে সৃষ্ট ৬ মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়া এবং আশপাশের অঞ্চল বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে।

কুতুবদিয়ার উপকূলীয় জীবন: বিপন্ন হয়ে উঠেছে পরিবেশ

কুতুবদিয়া দ্বীপের সাগরতীরবর্তী এলাকা যেমন হাজি মফজল মিয়াপাড়া এবং মৌলভিপাড়া, সেখানে বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাগরের আগ্রাসন, প্রতি বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অতিরিক্ত জলোচ্ছ্বাস, এবং ঝড়ের কারণে বাসিন্দাদের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলোতে এখন মানুষ জীবনের অনিশ্চয়তার সঙ্গে বসবাস করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু ঘর সাগরের জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে, আর নারকেলগাছও সাগরে বিলীন হওয়ার পথে। এই চরম পরিস্থিতি দেখে বৃদ্ধা লায়লা বেগম, যিনি ৬০টির বেশি ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস দেখেছেন, বলছেন, “এই দ্বীপ দিন দিন বিলীন হচ্ছে। গত তিন দশকে ৬০-৭০ হাজার মানুষ এখান থেকে চলে গেছেন।”

দ্বীপের জলবায়ু উদ্বাস্তু: টেকসই বেড়িবাঁধের অভাব

কুতুবদিয়ার ভয়াবহ সাগরের বিপদের কথা বলার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মীর কাশেম জানান, “এখানে প্রায় ৪৫০টি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। অস্থায়ী বেড়িবাঁধ দিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না।”

এছাড়া, কুতুবদিয়ার বেশ কিছু এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে হাজার হাজার একর জমি ফসল উৎপাদনের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষত আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে এখানকার জনবসতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

সরকারি পদক্ষেপ: অসন্তুষ্টির কারণ

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে বাস্তবায়ন এখনও অসম্পূর্ণ। পাউবোর কক্সবাজার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বর্ষা আসার আগে ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ৫০ কোটি টাকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনও কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।

টেকসই সমাধান দরকার

কুতুবদিয়ার উপকূলীয় বাসিন্দাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—টেকসই বেড়িবাঁধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এই দ্বীপের বাসিন্দারা নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে জীবন-যাপন করতে পারেন। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, দুর্যোগপ্রবণতা, এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি এই অঞ্চলের জন্য সংকট আরও গভীর করে তুলছে।

তাহলে, কুতুবদিয়া বাসী কেন একটি টেকসই বেড়িবাঁধের প্রাপ্য নয়? সাগরের সাথে এই যুদ্ধ এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান এখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Call to Action

আপনি কি কুতুবদিয়ার বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে চান? জলবায়ু সংকট এবং পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবিলায় সচেতনতা বাড়াতে এখনই পদক্ষেপ নিন।

#ClimateChange #SustainableCoastline #EnvironmentalProtection #CoastalFlooding #CoxsBazar #ClimateCrisis #Kutatbdia #EcoSolutions

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ