কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে চিকিৎসার অভাবে এক হাতিশাবকের মৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে পার্কের ভেটেরিনারি হাসপাতালে হাতিশাবকটি মারা যায়, যার জন্য চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। তবে পার্ক কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, শাবকটির জন্য যথাযথ যত্ন নেওয়া হয়েছিল। ময়নাতদন্তে জানা গেছে, শাবকটির শরীরে ভাইরাল ইনফেকশন ছিল, এবং তার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা পর্যাপ্ত ছিল না। চিকিৎসার অভাবে হাতিশাবকের মৃত্যু
হাতিশাবকটির মৃত্যু: কি হয়েছিল?
৫ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং রেঞ্জের হরিণখোলা বুড়াবনিয়া বনাঞ্চলে এক হাতি মা হাতিশাবকটি প্রসব করে। তবে, প্রসবের কিছুক্ষণ পরেই মা হাতিটি মারা যায়। এরপর বনকর্মীরা শাবকটিকে উদ্ধার করে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি হাসপাতালে হস্তান্তর করেন। তারপরে থেকে শাবকটির চিকিৎসা চলছিল, কিন্তু এতদিন পরেও প্রাণীটির অকাল মৃত্যু ঘটেছে।
হাতিশাবকটি মারা যাওয়ার পর, পার্ক কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্তের জন্য দায়িত্ব নিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে যে, শাবকটির শরীরে ভাইরাল ইনফেকশন ছিল, যা তার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি না হওয়ার কারণে মৃত্যু ঘটেছে। তবে, সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্জন খাতেম জুলকার নাইন জানিয়েছেন যে, হাসপাতালের কর্মীরা শাবকটিকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখছিলেন এবং নিয়মিতভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছিল। চিকিৎসার অভাবে হাতিশাবকের মৃত্যু
চিকিৎসার অবহেলা বা স্বাভাবিক মৃত্যু?
হাতিশাবকের মৃত্যু নিয়ে অনেকেই চিকিৎসার অভাব এবং অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন। ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাফারি পার্কের অব্যবস্থাপনা এবং প্রাণীর সুরক্ষায় অবহেলার বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে বলা হয়েছিল যে, সাফারি পার্কে প্রাণী সুরক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় যথেষ্ট মনোযোগ দেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে এই হাতিশাবকের মৃত্যু ঘটানোর পেছনে যে অব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসায় অবহেলা ছিল, তা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
পরিবেশের ওপর প্রভাব
এই ধরনের মৃত্যু শুধু প্রাণীপ্রেমীদের জন্য নয়, পুরো পৃথিবীর পরিবেশের জন্য একটি বিপদ সংকেত। হাতি পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী, এবং তার মৃত্যু প্রমাণ করে যে আমাদের প্রাণী সুরক্ষায় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় কতটা সচেতনতা প্রয়োজন। পরিবেশবিদরা বলছেন, যেসব সাফারি পার্ক এবং প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই, সেগুলোতে প্রাণী মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
চকরিয়া সাফারি পার্কের অবস্থা: একটি গভীর দৃষ্টি
ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের বর্তমান অবস্থাও উদ্বেগজনক। একদিকে, সেখানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ চলছে, তবে অন্যদিকে চিকিৎসা এবং অবকাঠামোর উন্নতি প্রয়োজন। অনেক প্রাণী এখানে অনুপযুক্ত পরিবেশে থাকার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং তারা প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রাণী সুরক্ষা সংস্থাগুলোর পরামর্শ, এসব সাফারি পার্কে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ করতে হবে, যাতে প্রাণীদের মৃত্যুর হার কমানো যায়। এর পাশাপাশি, বনভূমি এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা করাও অপরিহার্য।
প্রাণী সুরক্ষায় দায়িত্বশীলতা: আমাদের ভূমিকা
হাতিশাবকের মৃত্যু আমাদের অনেক কিছু শেখাচ্ছে। এটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি চ্যালেঞ্জ যা আমাদেরকে প্রাণী সুরক্ষা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আরও সচেতন হতে বাধ্য করে। শুধু সরকার বা সংস্থাই নয়, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে এই পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর জন্য একটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে।
শেষ কথা
এখন সময় এসেছে যে, আমরা আমাদের পৃথিবী এবং এর বাসিন্দাদের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হই। যেভাবে আমরা নিজের স্বাস্থ্যের জন্য সচেতন, তেমনি আমাদের উচিত প্রাণী এবং পরিবেশের স্বাস্থ্য নিয়েও ভাবা। হাতিশাবকের মৃত্যু আমাদের সতর্ক করছে যে, একমাত্র সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপেই আমরা আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে পারব।
আপনি কি সচেতন পরিবেশ রক্ষায় অংশ নিতে চান? আমাদের পরিবেশবান্ধব পণ্যগুলি আপনার স্বাস্থ্য ও প্রকৃতির জন্য সহায়ক হতে পারে।
CTA: আজই আমাদের পণ্যগুলি সংগ্রহ করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখুন!