ঢাকার পরিবেশগত স্বাস্থ্য এখন এক সংকটময় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। শহরের ৩৩টি খাল, যা একসময় ছিল জীববৈচিত্র্যের আধার, বর্তমানে দখল ও দূষণের কারণে অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। তবে, এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) একটি সাহসী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে—এই খালগুলোকে দখল এবং দূষণমুক্ত রাখতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ। খালগুলোকে দূষণমুক্ত রাখার আন্দোলন শুরু
এ উদ্যোগের মাধ্যমে ঢাকার খাল এবং লেকগুলোকে সুরক্ষিত রেখে, দুই পাড়ে বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশের পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা রাখা হবে। ৫ মে অনুষ্ঠিত একটি সমন্বয় সভায়, ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ এই প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন, যা ঢাকার ভবিষ্যত পরিবেশ রক্ষার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। খালগুলোকে দূষণমুক্ত রাখার আন্দোলন শুরু
ঢাকার ৩৩টি খাল ও লেক: বর্তমান চিত্র
ঢাকা, যার খাল ও লেকগুলোর প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে, বর্তমানে ভয়াবহ দখল এবং দূষণের শিকার। বিশেষ করে, ডিএনসিসির আওতাধীন ২৯টি খাল, রাজউকের অধীন একটি লেক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪টি খাল—এই সবগুলো একসময় ছিল শহরের পরিবেশের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু অতি বাণিজ্যিকীকরণ এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই খালগুলো কার্যত অবহেলার শিকার হয়েছে।
ডিএনসিসি প্রশাসক জানিয়েছেন, এই খালগুলোর দুই পাড়ে সবুজায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা জানান, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা এসব খালের পাড়ে দেশীয় গাছ যেমন হিজল, জারুল রোপণ করবেন, যা পরিবেশগত ভারসাম্য পুনঃস্থাপনে সহায়ক হবে।
স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা: একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা
এ উদ্যোগের অন্যতম মূল লক্ষ্য হল স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, যারা খালের পাড়ে বৃক্ষরোপণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবেন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেমন রিভার এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (RSDB), গ্রীন ভয়েস, কমিউনিটি ভলান্টিয়ার্স, নগরাবাদ, সিডিসি, আশার আলো, ব্রাইটস এবং আরও অনেক সংগঠন সোশ্যাল ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে খালের পাড়ে গাছ রোপণ এবং তাদের সুরক্ষায় কাজ করবে।
এ উদ্যোগের মাধ্যমে খাল এবং লেকগুলোর তটভূমির উন্মুক্ত জায়গাগুলোতে গাছ লাগানো হবে, যা স্থানীয় জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করবে। স্বেচ্ছাসেবকরা এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে পরিবেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারবেন।
অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর সশक्त ভূমিকা
ঢাকার পরিবেশ রক্ষায় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংগঠন এগিয়ে এসেছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, বিভিন্ন সংগঠন খালগুলোর দুই পাড়ে বৃক্ষরোপণ করবে এবং ভবিষ্যতে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করবে। প্রতিটি সংগঠনকে সুবিধা অনুযায়ী নির্দিষ্ট খালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাতে তারা ডিএনসিসির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারে।
এসব সংগঠন পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং ঢাকার পরিবেশকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। ডিএনসিসির সহযোগিতায় তারা স্থানীয় সম্প্রদায়কে সচেতন করবে এবং খাল ও লেকগুলোকে জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
প্রশাসনের ভূমিকা: সুরক্ষা ও সমন্বয়
ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন এবং প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এই উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের সহযোগিতায় খালগুলোর পুনঃজীবন শুরু হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। এছাড়া, ঢাকা শহরের অন্যান্য পুরোনো পুকুরগুলোও শীঘ্রই উন্নয়ন করা হবে যাতে সেগুলো দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠতে পারে এবং জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে।
পরিবেশ রক্ষায় এক অনন্য পদক্ষেপ
এই উদ্যোগের মাধ্যমে সিলেট, চট্টগ্রাম, বা কক্সবাজারের মতো সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঢাকার পরিবেশের মধ্যেও ফিরে আনা সম্ভব। রাস্তাঘাট, আবাসন প্রকল্প এবং নগর জীবনের ভিড়ে যখন পরিবেশ হারিয়ে যেতে বসেছে, তখন এমন একটি উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের মাধ্যমে এই কাজকে সম্প্রসারিত করে ঢাকার একে একে সব খাল, লেক এবং জলাশয় দখল ও দূষণমুক্ত করা সম্ভব হবে।
শেষ কথা: একটি সুস্থ, সবুজ ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে
ঢাকার পরিবেশ পুনরুদ্ধারে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এটি শুধুমাত্র খাল ও লেকগুলোকে পরিষ্কার এবং সুস্থ রাখার কাজ করবে না, বরং একটি সবুজ এবং সুস্থ নগরী গড়ারও সুযোগ তৈরি করবে।
ঢাকা শহরের খাল, লেক এবং জলাশয়গুলোর এই পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার প্রয়াস আরও শক্তিশালী হবে। এখন সময় এসেছে, সবাই মিলে এই উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পরিবেশ রক্ষায় অংশগ্রহণ করার।
Call-to-Action (CTA):
আপনি যদি পরিবেশ রক্ষায় অংশ নিতে চান এবং ঢাকার এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সহযোগিতা করতে চান, তাহলে আমাদের [পণ্য/সেবা] কিনে পরিবেশের সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। আপনিও আপনার পরিবেশের প্রতি দায়িত্ববোধের পরিচয় দিন।