রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় অবৈধভাবে স্থাপিত একটি ইটভাটার কারণে অন্তত ৪১ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান, বিভিন্ন সবজি ও ফল, যা স্থানীয় কৃষকদের জন্য বিশাল আর্থিক ক্ষতি বয়ে এনেছে। কৃষকদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ চাওয়ার কারণে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এবং এ বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ এখনও গ্রহণ করা হয়নি। রংপুরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া
বিষাক্ত গ্যাসে কৃষকের ফসলের ক্ষতি
রংপুরের বামন সরদার এলাকায় অবস্থিত মেসার্স শিল্পী এন্টারপ্রাইজ (এমএসবি ব্রিকস) নামক এই ইটভাটাটি কৃষকদের জন্য বড় ধরনের পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করেছে। গত দুই সপ্তাহ আগে ইটভাটার আগুন নেভানোর জন্য বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়, যার কারণে ইটভাটার কাছের কৃষকের ৪০-৪৫ একর জমির ধান, সবজি, এবং ফলের গাছ নষ্ট হয়ে যায়। এর আগে গত বছরও একই কারণে কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়েছিল। রংপুরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করছেন, তাদের ফসলের ক্ষতির জন্য কোন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি, এবং ইটভাটার মালিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো দায়িত্ব নেয়নি। কৃষকরা জানান, ক্ষতিপূরণ চাওয়ার কারণে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের সঙ্কট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
অবৈধ ইটভাটা ও প্রশাসনের নীরবতা
স্থানীয় প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই ইটভাটাটি সম্পূর্ণ অবৈধ। পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, রংপুরের ২১৬টি ইটভাটার মধ্যে মাত্র ৩৫টি পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছে, এবং পীরগাছা উপজেলার ২৩টি ইটভাটার মধ্যে ১টি-ও পরিবেশের ছাড়পত্র পায়নি। তবে, প্রশাসন জানিয়েছে যে, ইটভাটা পরিচালনাকারীরা হাইকোর্টে রিট দায়ের করায় এটি ভাঙার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, ইটভাটাতে মেডিকেল বর্জ্য ও প্লাস্টিক পোড়ানো হয়, যা পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি সৃষ্টি করছে। এর ফলে এলাকার মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু প্রশাসন এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। রংপুরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া
প্রকল্পের ক্ষতি এবং পুনরায় সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া
ইটভাটার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছে ক্ষতিপূরণ প্রদানে আপত্তি তোলেন। তবে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে যে, পুনর্নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের অভিযোগ, টালবাহানার কারণে তারা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। কৃষকরা বলছেন, তাদের জীবিকা এখন এই জমির ওপর নির্ভরশীল, এবং যদি সঠিক ক্ষতিপূরণ না পাওয়া যায়, তাদের জন্য খুব কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হবে।
পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন: দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
রংপুরে অবৈধ ইটভাটার কারণে শুধু কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, এটি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া বাতাসের মান কমাচ্ছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর পাশাপাশি, গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করছে।
এছাড়া, পানি দূষণ এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব পড়ছে। এটা শুধু এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য নয়, বরং পুরো এলাকার পরিবেশের জন্য একটি বড় সংকট তৈরি করেছে।
শেষ কথা: পরিবেশ রক্ষা এবং ক্ষতিপূরণ
এই পরিস্থিতি থেকে কৃষকরা যখন যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা করেছিলেন, তখন তারা ন্যায্য বিচার পাচ্ছেন না। অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যদি এই অবস্থা অব্যাহত থাকে, তাহলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপদের আশঙ্কা আরও বাড়বে। এটি শুধুমাত্র কৃষকদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
Call to Action
এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার মতামত জানাতে এবং পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমাদের ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন। আরও পরিবেশ বিষয়ক পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং শেয়ার করুন!