ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাধার রামপুরা খাল বর্তমানে ভরাট হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তা একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি, বনশ্রী এলাকায় রামপুরা খালের অংশ বিশেষে রাতের অন্ধকারে মাটি ফেলা হচ্ছে, যা খালের সংকীর্ণতা এবং এর জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের পাড়ে মাটি ফেলার পাশাপাশি ময়লা ফেলাও বাড়ছে, যা খালের অবস্থা আরও খারাপ করছে। সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে ঢাকার খাল
রাতের অন্ধকারে খাল ভরাটের ঘটনা
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বনশ্রী শাখা সংলগ্ন এলাকায় রামপুরা খালের কিছু অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, কিছু চক্র রাতের অন্ধকারে খালপাড়ে মাটি ফেলে, যার ফলে এক সময়ের নড়াই নদী খ্যাত রামপুরা খালটি সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এই চক্রের কার্যকলাপের কারণে খালটি হুমকির মুখে পড়ছে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে ঢাকার খাল
রামপুরা-ডেমরা সড়কের বনশ্রী অংশে ডি ব্লক থেকে জি ব্লক পর্যন্ত সড়কের পাশে মাটির বড় বড় স্তূপ দেখা গেছে। বিশেষ করে ই ব্লক এলাকায় খালের পাড়ে বেশ বেশি মাটি ফেলা হয়েছে, ফলে খালটি অনেকটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
ময়লা ফেলানো: একক পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ
রামপুরা খালের পাশের এলাকায় সি ব্লক সংলগ্ন ময়লা রাখার কনটেইনার বসানো হয়েছে, যা খালের মধ্যে বর্জ্য প্রবাহিত করতে সহায়ক হচ্ছে। কনটেইনারে রাখা ময়লার অধিকাংশই খালে চলে যাচ্ছে, যার ফলে খালের জলাধার পরিষ্কারতা হারাচ্ছে। তাছাড়া, আশপাশের বাসাবাড়ির ময়লা এবং ভ্রাম্যমাণ দোকানের ময়লা, বিশেষ করে পচা শাকসবজি এবং ডাবের খোসা, খালে ফেলা হচ্ছে, যা খালের জন্য বিপদজনক।
বনশ্রী এলাকার ই ব্লকের ৯ নম্বর বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, “খাল অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। ট্রাকে করে কে বা কারা রাতের অন্ধকারে মাটি ফেলছে। এই মাটি অনেক দিন ধরে ফেলছে, এবং ময়লাও ফেলছে।”
সরকারের উদ্যোগ: খাল রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন
ঢাকা ওয়াসার একটি পাম্প এবং ডিএনসিসির সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) রামপুরা ব্রিজের পাশেই রয়েছে, কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধভাবে খাল দখল এবং মাটি ফেলার ঘটনা একেবারে নিয়মের বাইরে। এছাড়া, আফতাবনগরের কিছু বাড়ির মালিকরা সীমানা দেয়াল পার হয়ে খালের মধ্যে মাটি ভরাট করে শাকসবজির খেত তৈরি করেছেন, ফলে খালটি আরো সংকীর্ণ হচ্ছে এবং নাব্য হারাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে ঢাকার খাল
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক জানিয়েছেন, “খালে ময়লা ও মাটি ফেলার বিষয়টি আমি অবগত আছি। এটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে রাতের অন্ধকারে কেউ ফেলাচ্ছে। আমি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছি, যারা এই কাজ করছে তাদেরকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।”
এছাড়া, তিনি মনে করেন, কিছু খনন কাজ চলছে এবং সেই মাটি এখানে ফেলানো হচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: খালের অবস্থা ও পরিবেশগত বিপর্যয়
রামপুরা খাল ভরাট হওয়ার ঘটনায় পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে। যখন খালগুলোর নাব্যতা হারাতে থাকে, তখন তা বন্যা এবং জলাবদ্ধতার মতো সমস্যাগুলোর সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত নগরায়ণ খালগুলোর অবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলছে। সঠিক পদক্ষেপ না নিলে, খালগুলো একসময় পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে, যা শহরের পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের প্যাটার্ন পরিবর্তিত হচ্ছে, ফলে এসব খালগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং জলাবদ্ধতা সমস্যা বাড়ছে।
রামপুরা খাল রক্ষায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত?
রামপুরা খাল রক্ষার জন্য বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে:
- অবৈধ ভরাট বন্ধ করা: খালের পাড়ে অবৈধভাবে মাটি ফেলা বন্ধ করতে হবে এবং খালগুলো পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।
- জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ: খালগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
- সচেতনতা বৃদ্ধি: স্থানীয় বাসিন্দাদের খাল রক্ষায় সচেতন করতে হবে এবং ময়লা ফেলা বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
- সরকারি পদক্ষেপ: সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে খালের অবৈধ দখল এবং ময়লা ফেলা বন্ধ হয়।
শেষ কথা: পরিবেশ সচেতনতা ও খালের সংরক্ষণ
রামপুরা খাল এখন বড় সংকটের মধ্যে রয়েছে। এটি শুধু ঢাকার পরিবেশের জন্য হুমকি নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও বড় বিপদের কারণ হতে পারে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং খাল রক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
কল টু অ্যাকশন (CTA):
আপনি যদি খাল রক্ষা এবং পরিবেশ সচেতনতার বিষয়ে আরও জানতে চান এবং এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে চান, আমাদের পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করতে আমাদের পরিপূরক সেবাগুলি গ্রহণ করুন। আজই যোগাযোগ করুন!