বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরের তাপমাত্রা বাড়ছে এবং পরিবেশের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে নগর কৃষির প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে ছাদ বাগান তৈরি ও খালি জায়গায় সবুজায়ন শহরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক হতে পারে। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে নগর কৃষির দিকে নজর দিলে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তাপমাত্রা কমাতে নগর কৃষির সম্ভাবনা
১. নগর কৃষির ভূমিকা
বর্তমান সময়ে শহরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় নগর কৃষির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যত বেশি ছাদবাগান এবং খালি জায়গায় সবুজায়ন হবে, ততই শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শহরের ভবন, রাস্তা ও নির্মাণ এলাকা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সবুজায়নে মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার এই বিষয়ে বলেন, “তাপমাত্রা মরুভূমির মতো হয়ে যাচ্ছে, তাই সবুজায়ন একটি জরুরি পদক্ষেপ।” তিনি আরও বলেন, শহরের বাসিন্দারা নিজে থেকেই গাছ লাগানোর চেষ্টা করেন, তবে ছাদ বাগান করতে কিছু ভবন মালিকের সম্মতি মেলেনা। তাপমাত্রা কমাতে নগর কৃষির সম্ভাবনা
২. ছাদ বাগানের সুবিধা
ছাদ বাগান: তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী উপায়
ছাদ বাগান শহরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি শুধু পরিবেশের জন্য নয়, ভবনের জন্যও উপকারী। ছাদবাগান ভবনের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় এবং সেচের মাধ্যমে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। তবে অনেক ভবন মালিক ছাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে ছাদ বাগান করতে চান না। কিন্তু এই ধারণা ভুল। ছাদ বাগান বাস্তবে ভবনকে শীতল রাখতে সাহায্য করে এবং এটি ভবনের পরবর্তী ধ্বংসের আশঙ্কাও কমিয়ে দেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে
ধানমণ্ডি এবং লালমাটিয়ায় বেশ কিছু ভবনে ছাদ বাগান রয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই এলাকাগুলোর বেশিরভাগ ভবনে রুফটপ গার্ডেন রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, মানুষ এই ধরনের পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে আগ্রহী। তবে কিছু ভবন মালিক ছাদবাগান করার জন্য অনুমতি দিতে চান না। তাদের মতে, ছাদ বাগান গাছ লাগানোর কারণে ছাদ নষ্ট হতে পারে, কিন্তু ছাদবাগান করলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।
৩. নগর কৃষি এবং জলবায়ু পরিবর্তন
সামাজিক ও অর্থনৈতিক উপকারিতা
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নগর কৃষি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শহরের মধ্যে সবুজ এলাকা সৃষ্টি করে এটি কেবল তাপমাত্রা কমানোর কাজই করে না, বরং এটি স্থানীয় জনগণের জন্য আর্থিক সুযোগও সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, স্বপ্নধারা হাউজিং তাদের প্লটগুলোতে সবজি চাষ করে এবং সেখানে প্রায় ১২০০ মানুষ কাজ করছে, যা তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু ২০০% বাড়িয়েছে। এই ধরনের প্রকল্প শুধু পরিবেশে পরিবর্তন আনছে না, তা জনগণের আয়ের উৎসও তৈরি করছে। তাপমাত্রা কমাতে নগর কৃষির সম্ভাবনা
তাপমাত্রা কমানোর জন্য নগর কৃষির প্রভাব
ব্রাকের জলবায়ু পরিবর্তন প্রোগ্রামের প্রধান আবু সাদাত মনিরুজ্জামান খান বলেন, “আমি বেশ কিছু নগর কৃষি এলাকা ভ্রমণ করেছি এবং সেখানে সবুজ এলাকার প্রভাব দেখেছি। সেগুলি শহরের তাপমাত্রা কমানোর কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।”
৪. সরকারের ভূমিকা
সরকারের উদ্যোগ
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, সরকার নগর বনাঞ্চল রক্ষা ও বৃদ্ধিতে কাজ করছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার নগর কৃষিকে আরও জনপ্রিয় করতে চাইছে এবং নগরের সবুজায়ন নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
৫. আগামী দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি
নগর কৃষির ভবিষ্যত
নগর কৃষি আগামী দিনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। এটি শুধু পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, বরং শহরের মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ছাদ বাগান এবং সবুজায়ন শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে সহায়ক হবে। এখন সময় এসেছে, সবাইকে একযোগে কাজ করার এবং নগর কৃষিতে গুরুত্ব দেওয়ার।
শেষ কথা
শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে নগর কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে। ছাদ বাগান এবং খালি জায়গায় সবুজায়ন শহরের পরিবেশকে উন্নত করতে সহায়ক হবে। তাই, আসুন আমরা সবাই নগর কৃষির প্রতি গুরুত্ব দেই এবং এটি বাস্তবায়নে সহায়তা করি।
কল টু অ্যাকশন
আপনি কি নগর কৃষিতে অংশগ্রহণ করতে চান? ছাদ বাগান এবং সবুজায়নে আপনার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন! এখনই এই উদ্যোগে যোগ দিন এবং পরিবেশকে রক্ষা করতে সহায়তা করুন।