27.4 C
Bangladesh
শনিবার, জুন ২৮, ২০২৫
spot_img

বাংলাদেশের সুপারশপগুলো এখন শতভাগ পলিথিনমুক্ত!

ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৫: আমরা যখন প্রতিদিন বাজার করতে যাই, তখন অবচেতন মনেই হাতে তুলে নিই একটি পলিথিন ব্যাগ। কিন্তু এই সহজলভ্য বস্তুটি আমাদের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন-এর জন্য কতটা ভয়ংকর, তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? আশার কথা হলো, এই চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছেন: দেশের সুপারশপগুলো এখন শতভাগ পলিথিনমুক্ত! শতভাগ পলিথিনমুক্ত

বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীতে বৃক্ষমেলা ও পরিবেশ মেলা পরিদর্শনের সময় তিনি এই সুসংবাদ দেন। এটি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে আমাদের দীর্ঘ লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। তবে এটি কেবল শুরু মাত্র। পরিবেশ বাঁচাতে সরকার একগুচ্ছ সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে, যা আমাদের একটি সবুজ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। শতভাগ পলিথিনমুক্ত

প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ: শুধু সুপারশপেই শেষ নয়

সুপারশপগুলোকে পলিথিনমুক্ত করা একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ, কিন্তু সরকারের লক্ষ্য আরও ব্যাপক। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান দেশজুড়ে অব্যাহত থাকবে। এর পাশাপাশি, একবার ব্যবহারযোগ্য (সিঙ্গেল ইউজ) প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় প্রাথমিকভাবে ১৭টি পণ্যকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য—”প্লাস্টিক দূষণ আর নয়”—এর সাথে এই পদক্ষেপগুলো সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে সাহসী এবং কার্যকর ভূমিকা পালনে বদ্ধপরিকর। শতভাগ পলিথিনমুক্ত

নদী ও বন বাঁচাতে সমন্বিত উদ্যোগ

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো আমাদের প্রাকৃতিক ঢাল—নদী ও বনকে রক্ষা করা। এই লক্ষ্যে সরকার যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:

  1. নদীর প্রাণ ফেরাতে: দেশের সকল নদ-নদীর একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঢাকার ফুসফুস হিসেবে পরিচিত তুরাগসহ চারটি প্রধান নদী ও ২০টি খালের জন্য তৈরি হয়েছে “ব্লু-নেটওয়ার্ক” পরিকল্পনা। বড়াল, করতোয়া, সুতাংসহ ১৫টি মৃতপ্রায় নদীর পুনরুজ্জীবন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এমনকি নদীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চালু হচ্ছে অভিনব ‘হেলথ কার্ড’ ব্যবস্থা।
  2. বনভূমির সুরক্ষা: বন সংরক্ষণে মধুপুর শালবন ও চুনতি বনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বনভূমি পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। আশার কথা হলো, এরই মধ্যে ১১,৪৫৯ একর বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে “নো-ব্রিকফিল্ড জোন” গঠন এবং পুরনো যানবাহন নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো হচ্ছে, যা সরাসরি বায়ু দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২,০০০ অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে, যা একটি বিশাল সাফল্য।

শুধু আইন নয়, সংস্কার হচ্ছে পুরো কাঠামো

একটি শক্তিশালী পরিবেশ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী আইন এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান। এই বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে:

  1. ১৯২৭ সালের বন আইন এবং ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের মতো পুরনো আইনগুলোকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে।
  2. পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য একটি পৃথক ক্যাডার গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা প্রশাসনে আরও গতিশীলতা আনবে।
  3. বন অধিদপ্তরে একটি বিশেষায়িত “বন্যপ্রাণী উইং” গঠন এবং বনকর্মীদের জন্য ঝুঁকিভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো নিশ্চিত করবে যে, পরিবেশ রক্ষার আইনগুলো শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং মাঠেও কার্যকর হবে।

পরিবেশ মেলা: সচেতনতার এক নতুন দুয়ার

এই সকল সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধিও অত্যন্ত জরুরি। সেই লক্ষ্যে রাজধানীতে শুরু হয়েছে “বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২৫” এবং “জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০২৫”। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মেলার উদ্বোধন করেন।

পরিবেশ মেলা ২৫ থেকে ২৭ জুন এবং বৃক্ষমেলা ২৫ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলাটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এটি আমাদের পরিবেশ এবং প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে এবং সচেতন হতে একটি দারুণ সুযোগ।

শেষ কথা: অস্তিত্বের প্রশ্ন, লড়াইটা আমাদের সবার

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কথায়, “পরিবেশ সুরক্ষা শুধু দায়িত্ব নয়, আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।” সুপারশপকে পলিথিনমুক্ত করা, নদী-বন রক্ষা, এবং আইন সংস্কারের মতো সরকারের এই উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু এই লড়াই একা সরকারের নয়।

এই উদ্যোগগুলো তখনই শতভাগ সফল হবে, যখন আমরা সাধারণ মানুষ আমাদের দায়িত্বটুকু পালন করব। পলিথিনের বদলে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা, অপ্রয়োজনে প্লাস্টিক বর্জন করা, এবং বৃক্ষরোপণের মতো ছোট ছোট পদক্ষেপই সম্মিলিতভাবে এক বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

আপনি কি আপনার এলাকার সুপারশপে পলিথিনের বদলে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করছেন? পরিবেশ রক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগগুলো নিয়ে আপনার মতামত কী? নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের জানান এবং এই সবুজ আন্দোলনে শরিক হোন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ