27.5 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৭, ২০২৫
spot_img

ঘন ঘন ফ্লু হওয়ার জন্য কি দূষিত পরিবেশ দায়ী?

জ্বর, শরীর ব্যথা, আর ক্লান্তি—এই লক্ষণগুলো দেখলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে মৌসুমী ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার কথা। এত দিন আমরা জানতাম, এটি মূলত শীতকালের অসুখ। ঠান্ডা পড়তেই সবাই একটু বাড়তি সতর্ক হতাম। কিন্তু আজকাল কি খেয়াল করেছেন, এই ফ্লু আর মৌসুমের তোয়াক্কা করছে না? ভরা বর্ষা বা অসময়ের গরমেও হানা দিচ্ছে এই ভাইরাস। দূষিত পরিবেশ দায়ী

এই যে ঋতুর খামখেয়ালিপনা, এর সাথে আমাদের স্বাস্থ্যের সম্পর্কটা ঠিক কী? আমরা হয়তো ভাবছি এটা সাধারণ অসুস্থতা, কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে এক গভীর সংযোগ, যার নাম পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন। চলুন, মৌসুমী ফ্লু-এর মুখোশের আড়ালের সেই গল্পটাই আজ জেনে নিই। দূষিত পরিবেশ দায়ী

মৌসুমী ফ্লু: চেনা শত্রু, নতুন রূপ

ইনফ্লুয়েঞ্জা বা মৌসুমী ফ্লু হলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘এ’ এবং ‘বি’ ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি অত্যন্ত সংক্রামক শ্বাসযন্ত্রের রোগ। এর সাধারণ লক্ষণগুলো আমাদের সবারই কমবেশি জানা:

  1. হঠাৎ তীব্র জ্বর (১০১° ফারেনহাইট বা তার বেশি)
  2. গা, হাত-পায়ে ব্যথা
  3. গলা ব্যথা ও শুকনো কাশি
  4. সর্দি বা নাক বন্ধ থাকা
  5. প্রচণ্ড ক্লান্তি এবং অবসাদ

সাধারণত এই ফ্লু কয়েক দিনের মধ্যে সেরে গেলেও, এটিকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে কিছু মানুষের জন্য এটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি, এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। দূষিত পরিবেশ দায়ী

কারা আছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?

যেকোনো লড়াইয়ে যেমন দুর্বল পক্ষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফ্লু-এর বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের লড়াইটাও ঠিক তেমনই। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল, তাদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। যেমন:

  1. শিশু: তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিকশিত না হওয়ায় তারা সহজে আক্রান্ত হয়।
  2. বয়স্ক ব্যক্তি (বিশেষ করে ৬৫ বছরের বেশি): বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে।
  3. অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি: যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি বা হৃদরোগের মতো কো-মরবিডিটিতে ভুগছেন, তাদের জন্য ফ্লু মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে।

এই মানুষগুলোর জন্য ফ্লু সাধারণ সর্দি-কাশির চেয়ে অনেক বেশি কিছু। তাই শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি।

জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে ফ্লু-কে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে?

এখন আসা যাক মূল প্রশ্নে। শীতকালের একটি সাধারণ রোগ কেন এখন সারা বছরের আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে? এর পেছনে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে ভূমিকা রাখছে?

১. ঋতুর খামখেয়ালিপনা: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুচক্র তার স্বাভাবিক ছন্দ হারাচ্ছে। শীতকালে শীত কম, গরমকালে তীব্র তাপপ্রবাহ, আবার অসময়ে ভারী বৃষ্টি—এইসব অস্বাভাবিকতা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় বেশি সক্রিয় থাকে। ঋতু পরিবর্তনের ফলে এখন বছরের বিভিন্ন সময়ে সেই অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে, ফলে তাদের প্রকোপও বাড়ছে।

২. দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: দূষিত বায়ু, অনিয়মিত আবহাওয়া এবং পরিবেশগত চাপ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রতিনিয়ত দুর্বল করে দিচ্ছে। আমাদের ফুসফুস যখন দূষণের বিরুদ্ধে লড়তে ব্যস্ত থাকে, তখন ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসগুলো খুব সহজে আক্রমণ করার সুযোগ পেয়ে যায়।

৩. প্রাণীর বাসস্থান পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক পশুপাখি, বিশেষ করে পরিযায়ী পাখিরা তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান ও গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। এই পাখিরা অনেক সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। যখন তারা নতুন নতুন এলাকায় বিচরণ করছে, তখন ভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে।

প্রতিরোধের দেয়াল: আমরা কী করতে পারি?

পরিবেশের এই বড় পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইটা যেমন সমষ্টিগত, তেমনি ব্যক্তিগত পর্যায়েও আমাদের সুরক্ষার দেয়াল গড়ে তুলতে হবে।

  1. টিকা নিন, সুরক্ষিত থাকুন: ফ্লু থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা বা ফ্লু শট। এই টিকা ভাইরাসের নির্দিষ্ট স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। প্রতি বছর নতুন স্ট্রেইনের জন্য নতুন টিকা আসে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত টিকা নেওয়া উচিত।
  2. স্বাস্থ্যবিধিই প্রধান অস্ত্র: করোনা মহামারি আমাদের স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব নতুন করে শিখিয়েছে। ফ্লু-এর ক্ষেত্রেও নিয়মগুলো একই।
    1. কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া।
    2. হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ ও নাক ঢাকা।
    3. অসুস্থ বোধ করলে মাস্ক পরা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলা।
  3. ভেতর থেকে শক্তিশালী হোন: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হলে যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হয়।
    1. স্বাস্থ্যকর খাবার: আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি এবং প্রোটিন।
    2. নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিক সচলতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
    3. পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম শরীরকে পুনর্গঠিত হতে সাহায্য করে।

শেষ কথা

মৌসুমী ফ্লু এখন আর কেবল একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা নয়। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট জটিল সংকটের একটি উপসর্গ মাত্র। আমাদের বুঝতে হবে, আমাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য এবং গ্রহের স্বাস্থ্য একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। একটি সুস্থ পরিবেশ ছাড়া আমরা কেউই পুরোপুরি সুস্থ থাকতে পারব না। তাই ফ্লু-এর টিকা নেওয়ার পাশাপাশি আমাদের পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়েও সচেতন হতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে আমাদের জনস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে, সে সম্পর্কে আরও জানতে চান? আপনার প্রতিষ্ঠান কি জলবায়ু অভিযোজন এবং জনস্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী? টেকসই সমাধান ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আসুন, একটি সুস্থ পৃথিবীর জন্য একসাথে কাজ করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ