জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন্যাঃ প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে?
বন্যা এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা আমরা বহুকাল থেকে মোকাবিলা করে আসছি, কিন্তু ইদানিং তা আরও খারাপ হচ্ছে। শহরে আকস্মিক বন্যা থেকে শুরু করে জলাশয় তথা নদনদীর পানি উপচে পড়া এখন প্রায়ই ঘটছে এবং তা খুব বিপজ্জনক। এটি কেন ঘটছে? জবাব জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে! চলুন দেখা যাক, জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে বন্যাকে ভয়ের কারণ হিসাবে দাঁড় করাচ্ছে এবং আমাদের কী করণীয় আছে।
জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে বন্যার মাত্রা বৃদ্ধি করছে?
জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের এ গ্রহের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমরা বেশি বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখতে পাচ্ছি। বন্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, উষ্ণ বায়ু বেশি পরিমাণ আর্দ্রতা ধরে রাখে। যখন বৃষ্টি হয়, তখন তা ঢেলে দেয়। এর ফলে অতিবৃষ্টি সৃষ্টি হয় এবং যখন অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বৃষ্টি হয়, তখন মাটি এবং নালা নর্দমা তা ধারণ করতে না পেরে পানি উপচে বন্যার সৃষ্টি করে।
উপরন্তু, হিমবাহ গলে যাচ্ছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি উপকূলীয় এলাকার জন্য খুব বড় একটি সমস্যা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেশি থাকলে একটি ছোট ঝড়ের ফলেও বড় বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেসব অঞ্চলে কখনোই বন্যা হয়নি, এরকম অঞ্চলও এখন হুমকির মধ্যে রয়েছে।
আরও বন্যার জন্য আমাদের কেন সতর্ক হওয়া উচিত?
বন্যা একটি অসুবিধার তুলনায় বেশি কিছু, যা কিনা জীবনযাত্রা পাল্টে দিতে পারে। বন্যা ঘরবাড়ি ধ্বংস করে, ফসল নষ্ট করে এবং এমনকি জীবননাশও ঘটায়। বন্যা অনেক বড় অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধনও করে থাকে। বন্যা পরবর্তী পুনর্গঠন ব্যায়বহুল এবং এর ফলে অনেকের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
কিন্তু এটি কেবলমাত্র তাৎক্ষণিক পরিবর্তনেরই দাবি রাখে না। বন্যার পর দূষিত পানির কারণে অনেক রোগবালাই ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিছু স্থানে টানা বন্যার কারণে সেখানকার জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে, যার ফলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এসব থেকে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে, বন্যা শুধুমাত্র এলাকাভিত্তিক সমস্যা নয়, বরং তা একটি বৈশ্বিক ও সার্বজনীন সমস্যা বটে, যা বিশ্বের সকলেরই ক্ষতি করতে পারে।
বেশি বন্যা প্রতিহত করার জন্য আমরা কী করতে পারি?
আমরা বৃষ্টি বন্ধ করতে না পারলেও বন্যার প্রভাব কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। প্রথম ধাপ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করা। কার্বন নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানো যায়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, মোটরযানের ব্যবহার হ্রাস এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা সকলেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহ কমাতে অংশগ্রহণ করতে পারি।
সম্প্রদায়গুলো আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে। নগরসমূহের উচিত তাদের নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানি আটকানোর ব্যবস্থা করে বন্যা প্রতিহত করা। বৃক্ষরোপণ এবং জলাভূমি সংরক্ষণের মাধ্যমে বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমানো সম্ভব।
আমাদের করণীয়
যদিও এটিকে অনেক বড় সমস্যা বলে মনে হচ্ছে, ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা সাহায্য করতে পারি। যেমনঃ
- বিদ্যুৎ সাশ্রয়ঃ অপ্রয়োজনে বাতি জ্বালিয়ে না রাখা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার।
- বর্জ্য কমানোঃ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং সম্ভব হলে পুনব্যবহার নিশ্চিত করা। কম বর্জ্য মানেই কম দুষণ।
- সবুজায়নকে সমর্থনঃ সমর্থন করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে অথবা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নীতি নির্ধারণ করতে হবে।
এ জিনিসগুলো করার মাধ্যমে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে পারি, এবং এর ফলে তীব্র বন্যার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
উপসংহার
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ঝুঁকিও বাড়ছে। শুনতে ভয়ংকর লাগলেও আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের সমাজকে বাঁচাতে পারি। আমাদের ছোট ছোট পরিবর্তন দ্বারা আমাদের এ গ্রহের ভবিষ্যতের জন্য বড় প্রভাব রাখা সম্ভব।