২০২৪ সালটি ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের এক নতুন দিগন্তের সূচনা। পৃথিবীজুড়ে তাপমাত্রা, সমুদ্রের তাপ, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি তীব্র হয়ে উঠেছে। এবছর একের পর এক ভয়াবহ রেকর্ড ভেঙে যাওয়ার ফলে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আমাদের চিন্তা আরও গভীর হয়েছে। এই বছর পৃথিবী যে মহামানবীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করার তাগিদ দেয়। ২০২৪ সালে জলবায়ুর
২০২৪ সালে উষ্ণতার নতুন রেকর্ড
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস ছিল পৃথিবীজুড়ে ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ। বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা ছিল ১৩.১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস—যা ২০২০ সালের আগের রেকর্ডের চেয়েও ০.১২ ডিগ্রি বেশি। এটি শুধু একটি সংখ্যার পরিবর্তন নয়, বরং আমাদের পরিবেশের প্রতি ক্রমবর্ধমান হুমকির প্রতিফলন। ফেব্রুয়ারি মাসে, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে, যা বৈশ্বিক উষ্ণতার নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই বিপর্যয়ের জন্য মূলত মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ দায়ী। কিন্তু এই পরিবর্তনের জন্য এল নিনো জলবায়ু প্যাটার্নও কিছুটা দায়ী। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, প্রবল ঝড় ও দুর্যোগগুলোও আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহ ও হারিকেনের তীব্রতা
২০২৪ সালের গ্রীষ্মকালটি ছিল বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ। ২২ জুলাই ছিল পৃথিবীর উষ্ণতম দিন, যেখানে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১৭.১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। এদিকে, ক্যাটাগরি-৫ হারিকেন ‘বেরিল’ আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্টি হয় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। গরম জলবায়ু পরিবেশের কারণে, ঝড়গুলো বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং এগুলোর প্রভাব আরও বিস্তৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, এমনকি ইউরোপের কিছু অংশেও এর বিপদজনক প্রভাব দেখা যায়।
দাবানল ও বন্যা: প্রকৃতির ভয়াবহ রূপ
এ বছরের অন্য একটি বড় বিপদ ছিল দাবানল ও বন্যা। বলিভিয়ায় দাবানল প্রায় ১০ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা পুড়িয়ে দিয়েছে, যা দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি। দাবানল শুধু যে বনাঞ্চল ধ্বংস করেছে তা নয়, বায়ু দূষণের কারণে সারা অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যও বিপন্ন করেছে।
অন্যদিকে, ইউরোপ, আফ্রিকা, এবং এশিয়ার কিছু দেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে, চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড, এবং স্লোভাকিয়ায় তিন মাসের সমান বৃষ্টিপাত মাত্র পাঁচ দিনে হয়েছিল, যা শত শত মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে দেয়। ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার ফলে পুরো এলাকার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালে জলবায়ুর
অস্ট্রেলিয়ায় রেকর্ড তাপদাহ
অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বড় জলবায়ু পরিবর্তন অনুভব করেছে। সেখানে ২৬ আগস্ট ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ শীতকাল। ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কিম্বারলি অঞ্চলে। এই পরিবর্তন শুধু তাপমাত্রার ব্যাপার নয়, বরং গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠেছে, যা মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ: কী করতে হবে আমাদের?
২০২৪ সালের ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর দূরবর্তী কোনো বিষয় নয়। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। পৃথিবী এখন যেসব রেকর্ড ভেঙে ফেলছে, তা শুধুমাত্র আমাদের সচেতনতার অভাবের ফলস্বরূপ। এখনো সময় রয়েছে, তবে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
পরিবর্তন সম্ভব, তবে একে একে নয়—এটি একটি সারা পৃথিবীর সংগ্রাম।
আমাদের প্রত্যেককে এই যুদ্ধে অংশ নিতে হবে। আমাদের জীবনযাত্রায় ছোট ছোট পরিবর্তন আনতে হবে, যেমন বেশি করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি ব্যবহার করা, পরিবহন ব্যবস্থায় বৈশ্বিক পরিবর্তন আনা, এবং শিল্প ব্যবস্থায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা। পাশাপাশি, আমাদের সরকার, বিজ্ঞানী এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি কাজ করতে হবে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
আপনি কী মনে করেন? জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? মন্তব্যে জানান এবং আমাদের সাথে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শেয়ার করুন।
আগামী বছরের মধ্যে আরও বিপদ আসবে। কিন্তু ধনী দেশগুলো এসব নিয়ে ভাবছে না।