বর্তমান পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন এক নিরব হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে গরমের তীব্রতা বাড়ছে এবং এর সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘসময় প্রচণ্ড তাপমাত্রায় থাকার কারণে মানুষের শারীরিক বার্ধক্য দ্রুত বাড়তে পারে। গরমে বাস করলে কি বার্ধক্য দ্রুত বাড়ে
গরমের প্রভাব: ত্বকে নয়, কোষে
এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬ বছরের বেশি বয়সী তিন হাজারেরও বেশি মানুষের রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল তাপমাত্রা এবং শারীরিক বার্ধক্যের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করা। ‘এপিজেনেটিক ওয়াচ’ নামের একটি জৈব রাসায়নিক পরীক্ষা ব্যবহার করে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের জৈবিক বয়সের ধারণা পান। ফলাফলটি চমকপ্রদ: অত্যন্ত উষ্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জৈবিক বয়স শীতল অঞ্চলের মানুষের তুলনায় অনেক বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি, সেখানকার বাসিন্দাদের জৈবিক বয়স বছর বছর বাড়ছে। বিশেষত, বছরে ১৪০ দিনের বেশি গরমের মধ্যে থাকা মানুষের শরীরে অজানা ক্ষয়ক্ষতি জমা হচ্ছে, যা কয়েক বছর পর বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই প্রভাব এমনকি ধূমপানের মতো ক্ষতিকর প্রভাবও ফেলতে পারে।
চরম তাপের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
গবেষণার সহ-লেখক ইউন ইয়ং চোই মন্তব্য করেছেন, তাপের এই প্রভাব তৎক্ষণাৎ দেখা না দিলেও কোষস্তর থেকে শুরু করে আণবিক স্তরে ক্ষতি করছে। যার ফলে, দীর্ঘমেয়াদী ক্ষয়ক্ষতি শরীরে জমতে থাকে এবং বয়সের সাথে সাথে স্বাস্থ্য সংকটের আশঙ্কা বাড়তে থাকে।
তবে এটি যে শুধু বয়সের ওপর প্রভাব ফেলছে তা নয়, তাপের এই ক্ষতি মানুষের মানসিক ও শারীরিক অবস্থাকেও পরিবর্তন করছে। গরমে বাস করা মানে শুধু এক ধরনের মানসিক ক্লান্তি নয়, এটি ক্রমাগত শারীরিক অসুস্থতার দিকে ধাবিত হতে পারে।
গরমে বাসের সাথে যুক্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি
গরম আবহাওয়া মানব শরীরের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা প্রতিটি সেলের কার্যকারিতা এবং সুষমতা ব্যাহত করে। অধিকাংশ মানুষই জানেন না, যে চরম তাপে শরীরের কোষগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ত্বকে কোনো বড় ধরনের সমস্যা দেখা না দিলেও, শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। যা কয়েক বছর পরে বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া, গরমের প্রভাবে মানসিক চাপও বেড়ে যায়। অধিক গরমে কাজ করতে গেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে ক্লান্তি, উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। গরমে বাস করলে কি বার্ধক্য দ্রুত বাড়ে
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্ক
গবেষণা অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বৃদ্ধির সাথে গরমের তীব্রতা আরও বাড়ছে। শীতল অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের তুলনায় গরম অঞ্চলের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেশি। এর ফলে, সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাস্থ্য সংকট আরও গুরুতর হয়ে উঠবে।
অধ্যাপক ন্যান্সি ক্রিগার এই গবেষণাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। তিনি বলেছেন, গরমের প্রভাব যে শুধু শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য খারাপ তা নয়, বরং এটি সমাজের বৃহত্তর উন্নতি এবং মানব জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
বার্ধক্যের সাথে সম্পর্কিত জীবনধারা
এছাড়া, বিভিন্ন জীবনধারার প্রভাবও মানুষের বার্ধক্যকে দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে। তাপমাত্রার পাশাপাশি জীবনযাত্রার অবস্থা, খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে গবেষণায় এসব বিষয় খোলাসা করা হয়নি, যা ভবিষ্যতে আরও বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে।
শেষ কথা
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যটি আমাদের শিখিয়েছে, গরমের তীব্রতা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। পৃথিবীজুড়ে তাপমাত্রার বৃদ্ধি আমাদের জন্য এক চ্যালেঞ্জ, যার প্রভাব আমরা কেবল ভবিষ্যতে আরো তীব্রভাবে অনুভব করব। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করছে এবং এগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এটি একটি সতর্ক সংকেত যে, আমরা যদি আমাদের পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার ধরণে পরিবর্তন না আনি, তাহলে আমাদের শরীরের কোষ এবং সাধারণ শারীরিক অবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আপনি কীভাবে গরমের প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে পারেন?
এ বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের জানান। 🌍
#জলবায়ু #গরম_আবহাওয়া #বার্ধক্য #স্বাস্থ্য #গবেষণা #জলবায়ু_পরিবর্তন #মানব_স্বাস্থ্য
