ভালুকার ধোবাজান খালে প্রাণ ফেরানোর লড়াই: দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জয়!
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ধোবাজান খাল, একসময় যা ছিল এলাকার প্রধান পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম, এখন দখল ও দূষণের কারণে সংকটে। প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা এবং খালের প্রাকৃতিক প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় জনগণ বছরের পর বছর ভোগান্তিতে রয়েছে।
শনিবার থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে এই খাল পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। দখলমুক্তির পাশাপাশি পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য খননযন্ত্রের সাহায্যে খালের ভরাট অংশগুলো কাটার কাজ চলছে।
ধোবাজান খালের গুরুত্ব
ধোবাজান খাল উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পোনাশাইল থেকে উৎপত্তি হয়ে মল্লিকবাড়ি ও ভালুকা ইউনিয়নের কাঁঠালী ও ধামশুর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খিরু নদে মিশেছে।
প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। একসময় এর মাধ্যমে বন্যার পানি সহজেই বের হয়ে যেত, ফলে ফসলি জমি ও জনজীবনে স্বস্তি ছিল।
কিন্তু খালের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়:
- ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত: জমি সারা বছর পানিতে ডুবে থাকে।
- রাস্তা ডুবে যায়: মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।
- জমি দখলের চক্রান্ত: জমি পানিতে ডুবে রেখে দাম কমানোর উদ্দেশ্যে প্রভাবশালীরা এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
প্রশাসনের উদ্যোগ
শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে খালের দখলকৃত অংশগুলোতে খননযন্ত্রের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০০ মিটার খাল পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, এবং আরও ৫০০ মিটার খালের অংশ খনন করে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকে খালটি দখল এবং ভরাট হয়ে আসছিল। একটি প্রতিষ্ঠান খাল দখল করে স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করায় পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
এই উদ্যোগকে স্থানীয়রা স্বাগত জানিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, খাল পুনরুদ্ধারের কাজটি দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কমাবে। ফসলি জমি ও চলাচলের রাস্তা আবার ব্যবহারের উপযোগী হবে।
একজন কৃষক বলেন, “এই খাল ঠিক হলে আমাদের জমি পানিমুক্ত হবে, ফসল ফলানো যাবে। এটা শুধু আমাদের নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও জরুরি।”
শিশুদের মধ্যেও খাল পুনরুদ্ধারের প্রতি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তারা খালের পানিতে আবার খেলার সুযোগ পাবে, এমন আশায় উচ্ছ্বসিত।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
খাল পুনরুদ্ধারের এই কাজ দখলদারদের বিরোধিতার কারণে সহজ হবে না। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, এই উদ্যোগে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। খালটি পুরোপুরি দখলমুক্ত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খালের প্রবাহ রক্ষার জন্য নিয়মিত তদারকি ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হবে। খাল ভরাট বা দখল থেকে মুক্ত রাখতে স্থানীয় জনগণকেও দায়িত্ব নিতে হবে।
সমাপ্তি: পরিবেশ পুনরুদ্ধারে সবার দায়িত্ব
ভালুকার ধোবাজান খাল পুনরুদ্ধারের এই উদ্যোগ কেবল একটি খালের প্রাণ ফেরানোর লড়াই নয়; এটি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এটি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় বার্তা। তবে স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন এবং পরিবেশবিদদের একত্রে কাজ করতে হবে, যাতে এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আর না ঘটে।
আপনার মতামত দিন: কীভাবে আমরা খাল ও নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে পারি? আপনার মন্তব্য শেয়ার করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে পোস্টটি শেয়ার করুন।