30.5 C
Bangladesh
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
spot_img

১৩ মাসে বনায়নের চমক: দেশের প্রথম মিয়াওয়াকি ফরেস্ট বদলে দিল পরিবেশের গল্প

সবুজ বিপ্লবের শুরু মিরসরাই থেকে

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথম মিয়াওয়াকি ফরেস্ট। এটি একটি ছোট এলাকা জুড়ে কৃত্রিমভাবে বন তৈরির অসাধারণ উদাহরণ। সোনাপাহাড় এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা এই বন প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং পরিবেশ পুনরুদ্ধারের একটি সফল গল্প হয়ে উঠেছে। ‘প্রকল্প সোনাপাহাড়’ নামের এই উদ্যোগটিতে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রাচীন জাপানি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের প্রথম মিয়াওয়াকি ফরেস্ট

মিয়াওয়াকি ফরেস্ট আসলে কী?

জাপানি উদ্ভিদবিদ আকিরা মিয়াওয়াকি উদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি করা এই বন দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পরিচিত। প্রচলিত বনায়নের তুলনায় এই পদ্ধতিতে গাছ ১০ গুণ দ্রুত বাড়ে এবং ৩০ গুণ বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয়, এটি খুব ছোট জায়গায়ও কাজ করে। মাত্র ১৩ মাসে মিরসরাইয়ের মিয়াওয়াকি ফরেস্ট দেখলে মনে হয় এটি এক যুগ পুরনো।

এই বন তৈরির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এখানে স্থানীয় প্রজাতির গাছের সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। এটি স্থানীয় জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য ভূমিকা রাখে।

কীভাবে তৈরি করা হলো মিয়াওয়াকি ফরেস্ট

মিয়াওয়াকি পদ্ধতিতে বন তৈরির প্রথম ধাপ হলো মাটি প্রস্তুত করা। মিরসরাই প্রকল্পে জৈব সার হিসেবে পচা লতাপাতা, গাছের গুঁড়ি এবং খড় ব্যবহার করা হয়েছে। তারপর মাটিকে ঢালু করে তৈরি করা হয়েছে বাগান। দুই বর্গফুট জায়গায় চার কোনায় চারটি করে গাছ লাগিয়ে তৈরি হয়েছে ঘন সবুজ এই বন।

১৩ মাসের মধ্যেই কিছু গাছ ১৭ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রকল্পে তুলসী, কদম, বাঁশ, বেতসহ প্রায় ১২০ প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে, যা পুরো এলাকাকে পরিণত করেছে এক বিশাল গাছের জাদুঘরে। দেশের প্রথম মিয়াওয়াকি ফরেস্ট

পরিবেশ পুনরুদ্ধারের একটি গল্প

সোনাপাহাড় এলাকাটি আগে ছিল পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার। ইটভাটার ধোঁয়া এবং পাহাড় কাটার ফলে এখানকার প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এমন অবস্থায় প্রকল্প সোনাপাহাড় নতুন করে এই এলাকাটিকে সবুজে রূপান্তরিত করেছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রকৃতির ক্ষতি না করেই এখানে সংরক্ষিত পর্যটনের ব্যবস্থা করেছেন, যা মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।

মিয়াওয়াকি ফরেস্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ

মিয়াওয়াকি পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি খুব কম সময়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বনায়ন করতে পারে। এ বন প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমাতে সহায়ক। স্থানীয় প্রজাতির গাছ ব্যবহার করায় এটি দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশে এর ভবিষ্যৎ কী?

এই উদ্যোগটি শুধু একটি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প নয়, এটি একটি উদাহরণ। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে যদি এই পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশে বনায়নের হার অনেকাংশে বাড়বে। বিশেষ করে, দেশের ন্যাড়া পাহাড়গুলোতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে দ্রুত সবুজায়ন সম্ভব।

পরিবেশ রক্ষায় আমাদের দায়িত্ব

মিয়াওয়াকি ফরেস্ট আমাদের দেখিয়েছে, ছোট উদ্যোগ থেকেও বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। পরিবেশকে ভালো রাখতে আমাদের সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আপনি কি মনে করেন, মিয়াওয়াকি পদ্ধতি বাংলাদেশে আরও বেশি প্রসারিত হওয়া উচিত? আপনার মতামত আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন। পরিবেশ নিয়ে আরও জানার জন্য আমাদের সাইটে সাবস্ক্রাইব করুন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ