গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার শান্তির মোড় এলাকা থেকে একটি হিমালয়ান প্রজাতির শকুন উদ্ধার করা হয়েছে। এটি শীতকালে হিমালয় অঞ্চলের ঠান্ডা থেকে বাঁচতে সমতলের দিকে আসা একটি পরিযায়ী প্রজাতি। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) শকুনটিকে গাইবান্ধা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেন পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তীর’-এর সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে শকুনটির অবস্থান জানা গেলে, ‘তীর’-এর সদস্যরা তাৎক্ষণিক একটি উদ্ধার টিম পাঠিয়ে শকুনটির সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।
কেন সমতলে আসে হিমালয়ান শকুন?
হিমালয়ের হিমঝড় এবং প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এই প্রজাতির শকুনগুলো সমতলে চলে আসে। মার্চের দিকে আবার তারা তাদের স্বাভাবিক বাসস্থানে ফিরে যায়। তবে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার ক্লান্তি এবং পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে শকুনগুলো প্রায়ই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় তারা স্থানীয় এলাকায় মাটিতে পড়ে যায়, যা সংরক্ষণ এবং উদ্ধার কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তোলে।
শকুনের ভূমিকা: প্রকৃতির ঝাড়ুদার
শকুন মৃত প্রাণীদের মাংস খেয়ে প্রকৃতি পরিষ্কার রাখে। এ কারণে শকুনকে “প্রকৃতির ঝাড়ুদার” বলা হয়। শকুন মৃত প্রাণী থেকে ছড়াতে পারে এমন রোগ যেমন অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, এবং খুরারোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এসব রোগ ছড়ানোর ঝুঁকিও বেড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও শকুনের সংকট
জলবায়ু পরিবর্তন হিমালয়ান শকুনের মতো পরিযায়ী পাখিদের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ায় তাদের প্রাকৃতিক অভ্যস্ততা পরিবর্তিত হচ্ছে। বাংলাদেশে শীতকালে আসা শকুনগুলোর জন্য খাবারের অভাব এবং আবাসস্থল সংকট বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের শকুন সংরক্ষণ কার্যক্রম
আইইউসিএনের মতে, বাংলাদেশে এখন মাত্র ২৬০টির মতো বাংলা শকুন অবশিষ্ট আছে। এর মধ্যে হিমালয়ান শকুন একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিযায়ী প্রজাতি। শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই প্রজাতির টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উদ্ধার করা হিমালয়ান শকুনটিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক। এ ধরনের উদ্যোগ পরিযায়ী শকুনদের বাঁচাতে এবং পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শকুন সংরক্ষণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শকুন শুধু পরিবেশ রক্ষায় নয়, জীবকূলের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বিলুপ্তি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। তাই শকুন সংরক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ আরও বাড়ানো জরুরি।
প্রকৃতি এবং পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবার দায়িত্ব! শকুন এবং অন্যান্য প্রজাতির সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পোস্টটি শেয়ার করুন। আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করুন।