বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষায় অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো নদী দূষণ এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং দ্রুত নগরায়নের ফলে পরিবেশের অবনতি দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে বিশেষ করে নদীগুলোর দূষণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ঢাকার আশপাশের নদীগুলোতে শিল্প কারখানা, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। নদী দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এডিবির কাছে সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চেয়েছেন। এডিবি বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন এবং জলবায়ু সহনশীলতা নিশ্চিত করার জন্য আগামী পাঁচ বছরে প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই অর্থ নদী পুনরুদ্ধার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যবহার করা হবে।
নদী দূষণ: চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
নদীগুলোর দূষণ বাংলাদেশে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের নদীগুলো যেমন বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী মারাত্মক দূষণের শিকার। এসব নদীতে অবৈধ বর্জ্য ফেলা, শিল্প বর্জ্য এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে দূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এতে জলজ প্রাণী ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। নদী দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন প্রয়োজন
শহরগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব এবং অপরিকল্পিত ডাম্পিং দেশের পরিবেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। কঠিন বর্জ্য, প্লাস্টিক এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিকমতো পরিচালিত না হওয়ায় নদীগুলোতে সরাসরি বর্জ্য প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে নদীগুলোর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। এডিবির সহযোগিতায় এসব সমস্যার সমাধানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব।
এডিবির প্রতিশ্রুতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন এবং জলবায়ু সহনশীলতা নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে এডিবি বাংলাদেশকে প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলার সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই অর্থ দেশের নদীগুলো পুনরুদ্ধার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবহৃত হবে।
নদী পুনরুদ্ধার ও পরিষ্কার কার্যক্রম
এডিবি ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর পরিষ্কার কার্যক্রমে অগ্রাধিকারমূলক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। তারা এই প্রকল্পগুলোর আওতায় নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। এডিবির মতে, নদীগুলোর পুনরুদ্ধার ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পগুলোকে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (NAP) অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এ উদ্যোগগুলো স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা এবং সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি
এডিবি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন, এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির উন্নয়নেও সহযোগিতা দিতে আগ্রহী। তারা দেশের শহরগুলোতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করবে। এর ফলে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমানো সম্ভব হবে।
জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা মোকাবিলা
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার প্রবেশ এবং জলাবদ্ধতার সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এডিবি এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং গবেষণামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে। তারা এসব এলাকায় সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং লবণাক্ততা সহনশীল ফসলের চাষাবাদে সহায়তা করবে।
মানুষ-হাতি সংঘাত নিরসন
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মানুষের বাসস্থান এবং হাতির আবাসস্থল সংঘাত কমানোর জন্য এডিবির সহযোগিতা চেয়েছেন। এডিবি এই সমস্যার সমাধানে বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে যা হাতিদের জন্য নিরাপদ করিডোর এবং মানুষের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ
এডিবি প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্থানীয় জনগণের পরামর্শ ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এটি পরিবেশ সুরক্ষা এবং জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
উপসংহার
নদী দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এডিবির সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এই উদ্যোগগুলোর সফল বাস্তবায়ন দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নদী দূষণ রোধ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।