অনুমোদনহীন মিনি চিড়িয়াখানায় বন বিভাগের অভিযান
ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জয়নুল আবেদিন উদ্যানে গড়ে ওঠা একটি অবৈধ মিনি চিড়িয়াখানায় বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। দীর্ঘদিন ধরে অনুমতি ছাড়াই এই চিড়িয়াখানা পরিচালিত হচ্ছিল। অভিযানের সময় ৪৮টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়। পরে পুরো চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দেয়া হয়। ৪৮ প্রাণী উদ্ধার করল বন বিভাগ
নাজুক অবস্থায় পাওয়া যায় প্রাণীগুলো
অভিযানের সময় দেখা যায়, প্রাণীগুলোর অবস্থা অত্যন্ত করুণ। অনেক প্রাণীই অসুস্থ, অপুষ্টিতে ভুগছে। খাবার ও পরিচর্যার যথাযথ ব্যবস্থা ছিল না। বিশেষ করে একটি ভালুকের শরীর পচে গিয়ে তাতে পোকা ধরেছে, যা দেখে উপস্থিত কর্মকর্তারা বিস্মিত হন। প্রাণীগুলোর চোখে-মুখে অসুস্থতার ছাপ স্পষ্ট ছিল। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এসব প্রাণী বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে খাঁচায় আটকে রাখা হয়েছে। এভাবে বন্দী অবস্থায় বন্যপ্রাণীর জীবনযাপন অত্যন্ত অমানবিক।
কোন আইনের ভিত্তিতে এই অভিযান
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ব্যতীত বন্যপ্রাণী সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা প্রদর্শন করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু অভিযুক্ত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। ফলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৪৮ প্রাণী উদ্ধার করল বন বিভাগ
কে চালাত এই চিড়িয়াখানা
জানা যায়, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ পাঁচ বছরের জন্য চিড়িয়াখানাটি ইজারা দেয়। তবে নির্ধারিত সময় শেষে ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে এই চিড়িয়াখানা চালু রাখে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের অনুমতি ছাড়াই এখানে প্রাণী প্রদর্শন চলছিল।
উদ্ধার হওয়া প্রাণীদের ভবিষ্যৎ
উদ্ধার হওয়া প্রাণীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা চলছে। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সুস্থ হয়ে উঠলে এসব প্রাণীকে সাফারি পার্ক, জাতীয় চিড়িয়াখানা বা নিরাপদ অভয়ারণ্যে স্থানান্তর করা হবে। আর কিছু প্রাণীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তাদের প্রকৃত বাসস্থানে ছেড়ে দেওয়া হবে। প্রাণীদের খাবার, চিকিৎসা ও পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন প্রাণী সেবা সংগঠন এগিয়ে এসেছে।
আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ জানান, প্রাণীদের প্রতি এমন নির্দয় আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী আটকে রাখার এই অপরাধের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে
এই অভিযান সকলের জন্য একটি বড় বার্তা। বন্যপ্রাণী কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সকলের দায়িত্ব। আইনের সঠিক প্রয়োগ ছাড়াও আমাদের মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি। প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণই হতে পারে আগামী দিনের নিরাপদ পরিবেশের মূল ভিত্তি।
