পরিবেশ ও জলবায়ুর প্রভাবেই বদলে যাচ্ছে চরজীবন
দিনাজপুরের আত্রাই নদীর তীরে জেগে ওঠা একটি চর এখন অনেক কৃষকের কাছে আশীর্বাদের নাম। বছরের পর বছর ধরে চরের মাটিতে আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন গ্রামের সাধারণ কৃষকেরা। অথচ একসময় এই চর ছিল অনুৎপাদনশীল ও অপ্রতিষ্ঠিত একটি এলাকা। জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদীর প্রবাহের পরিবর্তনের ফলে এখন সেখানে ফসল ফলছে, জীবন ফিরে পাচ্ছে শত শত পরিবার। আত্রাইয়ের চরে কৃষির জাগরণ
কৃষির হাত ধরে স্বাবলম্বিতা: গম, আলু থেকে লাউ-মরিচ
চৈত্রের দুপুরে চক গোপাল চরের চিত্র যেন এক রঙিন চিত্রপট। গমের সোনালি শিষে দুলছে হাওয়া, মাচাঙে ঝুলছে লাউ, আর পাশে মরিচ-পেঁয়াজের সারি। ষাটোর্ধ্ব মোখলেছার ও এলিজা দম্পতির মতো বহু কৃষকই আজ এই চরের জমিতে কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
মোখলেছার জানান, ”এখন চরটা আমাদের আয়ের প্রধান উৎস।” দেড় বিঘায় আলু চাষ করে ৬০ হাজার টাকা খরচে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি। এর সঙ্গে গম, মরিচ ও পেঁয়াজও আছে।
নারীদের অংশগ্রহণ: চরজীবনের অপরিহার্য শক্তি
রাবেয়া খাতুনের মতো অনেক নারীই সকালবেলা গৃহস্থালির কাজ শেষ করে চলে আসেন চরে কৃষিকাজে। তিনি বলেন, “আমরা তেল-লবণ ছাড়া কিছুই কিনি না। সবজিসহ সবকিছু এখানেই হয়।” নারীদের এই সক্রিয় অংশগ্রহণ চরজীবনকে আরও শক্তিশালী করছে। আত্রাইয়ের চরে কৃষির জাগরণ
পরিবেশ ও জলবায়ুর অবদান
২০১৭ সালের বন্যার পর থেকে নদীর গতিপথ ও পানি প্রবাহ কমেছে। এতে চর বড় হয়েছে, এবং জমি হয়েছে আরও উর্বর। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চরে জমা পড়া পলি ও পরিবেশগত ভারসাম্যই মূলত এই উর্বরতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
কৃষি উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থা ও সরকারের ভূমিকা
স্থানীয় এনজিও এমবিএসকে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় এনেছে, দিচ্ছে বিনামূল্যে বীজ, সার ও সেচের সহায়তা। কৃষি বিভাগও নানা প্রণোদনা ও পরামর্শ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, “শুষ্ক মৌসুমে নদ-নদীর চরে ফসল উৎপাদনের প্রবণতা বাড়ছে, যা একদিকে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার দিকেও নিয়ে যাচ্ছে।”
চরজমির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব যেমন উদ্বেগ তৈরি করছে, তেমনি চরজমির মতো প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে সৃজনশীলতা ও অভিযোজন ক্ষমতা দেখাচ্ছে গ্রামবাংলার মানুষ। এই চরগুলো শুধু কৃষকের জীবিকা নয়, বরং হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদনের অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।
শেষ কথা
আত্রাইয়ের চর আজ কেবল একটি জায়গা নয়, বরং এটি এক উদাহরণ—জলবায়ু পরিবর্তনের মাঝেও কিভাবে মানুষ প্রকৃতিকে বুঝে টিকে থাকতে পারে। চরজমিতে কৃষির এই নবযাত্রা কেবল খাদ্য বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বার্তাই দেয় না, বরং পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের এক দুর্দান্ত দৃষ্টান্তও হয়ে উঠছে।
Call to Action (CTA):
আপনি কি জানেন আপনার অঞ্চলেও এমন চরজমি থাকতে পারে? কমেন্টে জানান আপনার অভিজ্ঞতা, আর এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন যেন আরও মানুষ চরজমির সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারে।
#চরজীবন #আত্রাই #পরিবেশ #জলবায়ুপরিবর্তন #টেকসই_উন্নয়ন #কৃষিবাংলা
