হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নালুয়া চা-বাগান থেকে একটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করেছে বন বিভাগের সদস্যরা। শনিবার দুপুরে বাগানের এক চা-শ্রমিক এ বানরটি দেখতে পান, যা সম্ভবত তার অভ্যন্তরীণ বাসস্থান থেকে পথ হারিয়ে বাগানের মধ্যে চলে আসে। তৎক্ষণাৎ বন বিভাগকে খবর দেওয়া হলে, সাতছড়ি বন বিভাগের কর্মকর্তারা দ্রুত সেখানে পৌঁছে বানরটি উদ্ধার করে নিরাপদে পুনরায় বনে ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত হন। লজ্জাবতী বানর উদ্ধার অভিযান
লজ্জাবতী বানর: একটি বিরল প্রাণী
লজ্জাবতী বানর, যার বৈজ্ঞানিক নাম Nycticebus bengalensis, বাংলাদেশের অন্যতম বিরল নিশাচর প্রাণী। এরা সাধারণত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে বসবাস করে এবং এই প্রাণীটি আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)-এর লাল তালিকায় ‘সংকটাপন্ন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত। এই বানরটি লাজুক প্রকৃতির হওয়ায়, এর সংখ্যা দেশে বেশ কম এবং এটি অত্যন্ত বিরল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রাণীটি সাধারণত বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড় এবং গাছের কষ খেয়ে বেঁচে থাকে।
পুনরায় বনেই ফিরে যাবে
বন কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ ও মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, উদ্ধার করা বানরটির বয়স ৬ থেকে ৭ বছর এবং এটি একটি পূর্ণবয়স্ক বানর। উদ্ধারের পর, বানরটি কিছু সময় সেবা ও শুশ্রূষা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং এটি এখন নিরাপদে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। বন বিভাগ শীঘ্রই বানরটি বনে ছেড়ে দেবে যাতে এটি স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে। লজ্জাবতী বানর উদ্ধার অভিযান
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং আইনগত দৃষ্টিভঙ্গি
হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, লজ্জাবতী বানর পরিবেশবান্ধব একটি প্রাণী, যা খাঁচায় বন্দী করা অনুচিত। তিনি বলেন, “এটি একটি মুক্ত প্রকৃতির প্রাণী, এবং এটা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী যদি কেউ এটি বন্দী করে রাখে।”
বন কর্মকর্তারা এবং পরিবেশবিদরা সম্মিলিতভাবে এই প্রাণীটির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন, যেন এটি বনের মাঝে স্বাধীনভাবে জীবন কাটাতে পারে। এর সুরক্ষা শুধু একটি প্রাণীকে বাঁচানোর কাজ নয়, বরং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় এটি একটি বড় পদক্ষেপ।
পরিবেশের গুরুত্ব এবং বন রক্ষার আহ্বান
এটি স্পষ্ট যে, পরিবেশ রক্ষা এবং বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। এই ধরনের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য আমাদের সচেতনতা এবং দায়িত্বশীলতা জরুরি। আমরা যদি বন ও প্রাণী সংরক্ষণে গুরুত্ব না দিই, তবে তা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
হবিগঞ্জের নালুয়া চা-বাগানের এই ঘটনাটি আমাদের সব্বাইকে পরিবেশ সচেতন হওয়ার অনুপ্রেরণা প্রদান করে। বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য পরিবেশ গঠনে সাহায্য করবে।
শেষ কথা:
এই ঘটনা আমাদের পুনরায় মনে করিয়ে দেয় যে, বন্যপ্রাণী রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি আমাদের অবিচল মনোভাব থাকতে হবে। সকলের সচেতনতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্ষম হব।
মন্তব্য করুন: আপনি কি মনে করেন, আমাদের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? কমেন্টে জানিয়ে দিন।
#হবিগঞ্জ #লজ্জাবতীবানর #বন্যপ্রাণী #পরিবেশ #জীববৈচিত্র্য #বনসংরক্ষণ #বাংলাদেশ #প্রকৃতি