30 C
Bangladesh
শনিবার, মে ৩১, ২০২৫
spot_img

মশার বিরুদ্ধে ধানমন্ডিবাসীদের লড়াই: ৭০০ জনের নজিরবিহীন পরিচ্ছন্নতা অভিযান

পরিচ্ছন্ন শহর, নিরাপদ পরিবেশ—এই লক্ষ্য নিয়েই রাজধানীর ধানমন্ডিতে চালানো হয়েছে এক ব্যতিক্রমধর্মী বিশেষ অভিযান। “ধানমন্ডিতে মশা নিধনসহ বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান, অংশ নিলেন ৭০০ ব্যক্তি”—শিরোনামের এই খবরটি শুধুমাত্র একটি কার্যক্রমের গল্প নয়, বরং এটি একটি সচেতন নাগরিকতার প্রতিচ্ছবি, যা শহরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ স্থাপন করেছে। মশার বিরুদ্ধে ধানমন্ডিবাসীদের লড়াই

কী হয়েছে এই অভিযানে?

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে ধানমন্ডি এলাকায় বিশেষ মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেয় মোট ৭০০ ব্যক্তি—যাঁদের মধ্যে ছিলেন ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪৫০ জন কর্মী, স্বাস্থ্য বিভাগের ৫০ জন মশককর্মী, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ১০০ জন, বিডি ক্লিনের ৫০ জন এবং ধানমন্ডি সোসাইটির ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক।

সাতটি জোনে ভাগ করে অভিযান

ধানমন্ডি আবাসিক এলাকাকে সাতটি জোনে ভাগ করে মূল রাস্তা, লেক, পার্ক, মসজিদ ও ঈদগাহসংলগ্ন এলাকায় বিশেষভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মশকনিধনের কার্যক্রম চালানো হয়। বিভিন্ন এলাকায় ওষুধ ছিটানো, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একযোগে কাজ করেন অংশগ্রহণকারীরা।

সরকারের একীভূত পরিকল্পনা

এই অভিযানের সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী জানান, ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য নগরীতে রূপান্তর করতে সরকার একাধিক সংস্থার অংশগ্রহণে একটি সুপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে। এই মাস্টারপ্ল্যানে রাজউক, গণপূর্ত, বিআরটিএ, ঢাকা মহানগর পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে। এ ছাড়াও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে আলাদা একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ চলছে। মশার বিরুদ্ধে ধানমন্ডিবাসীদের লড়াই

বর্ষা মৌসুম ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ

ডিএসসিসির প্রশাসক শাহজাহান মিয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে শহরের প্রতিটি এলাকায় পর্যায়ক্রমে এ ধরনের বিশেষ অভিযান চালানো হবে। এই কার্যক্রম ধানমন্ডি থেকে শুরু হলেও শিগগিরই অন্যান্য এলাকায়ও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বৃটিশ আমল থেকেই ঢাকার জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয়েছে, কিন্তু যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে শহর তার কাঙ্ক্ষিত রূপ পায়নি। এখন সময় এসেছে সেই পরিকল্পনাগুলো কার্যকর করার।

সবুজ ফিরে পেতে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ

প্রশাসক শাহজাহান মিয়া আরও জানান, ঢাকার হারিয়ে যাওয়া সবুজ ফিরিয়ে আনতেই এবার বর্ষার শুরুতেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে। ঢাকাকে আবার একটি “বাগানের শহর” হিসেবে গড়ে তুলতে এটি হতে পারে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।

জনসচেতনতা তৈরিতে র‍্যালি

অভিযানের শেষ পর্যায়ে অতিথিরা অংশগ্রহণ করেন একটি জনসচেতনতামূলক র‍্যালিতে। উপস্থিত ছিলেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান, সংস্থাটির সব বিভাগীয় প্রধান ও ধানমন্ডি সোসাইটির নেতৃবৃন্দ। এই র‍্যালির মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়—শুধু সরকার বা সিটি করপোরেশন নয়, আমাদের প্রত্যেককেই পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হতে হবে।

কেন এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ?

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে শহর অঞ্চলে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ধানমন্ডির এই উদ্যোগ একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—পরিবেশ রক্ষা আর শুধু নীতিকথা নয়, এটি বাস্তব পদক্ষেপের বিষয়। মশার উৎপাত ও ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে শুধু ওষুধ ছিটানো যথেষ্ট নয়; চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতা।

ভবিষ্যতের পথচলা

এই ধরনের অভিযান যদি নিয়মিত ও পরিকল্পিতভাবে চালানো যায়, তবে শুধু ধানমন্ডি নয়, পুরো ঢাকা শহরেই ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। পরিবেশবান্ধব শহর গড়ে তুলতে হলে স্থানীয় সম্প্রদায়, সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং নাগরিকদের একযোগে কাজ করতে হবে।

শেষ কথা

পরিবেশ রক্ষায় ধানমন্ডির এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে এটি যেন একদিনের শো-পিস কর্মসূচি না হয়ে যায়। বরং এটি হোক একটি চলমান আন্দোলনের শুরু। নাগরিকদের সচেতনতা, সরকারের আন্তরিকতা আর একীভূত পরিকল্পনার সমন্বয়ই পারে আমাদের নগর জীবনকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে তুলতে।

🟢 চলুন, আমরাও এগিয়ে আসি। নিজ নিজ এলাকায় পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় অংশ নিই। আপনি-আমি মিলে গড়ে তুলি একটি সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ ঢাকা।

➡️ আপনি কী মনে করেন এই ধরনের অভিযানের ভবিষ্যত নিয়ে? কমেন্টে জানান আপনার মতামত! শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন বার্তাটি! #ধানমন্ডিতে_মশা_নিধনসহ_বিশেষ_পরিচ্ছন্নতা_অভিযান #পরিবেশ #জলবায়ু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ