নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার বনমালিকুঁড়ি গ্রামে রয়েছে প্রকৃতির এক চমৎকার দৃশ্য। ফসলি জমি কেটে তৈরি করা প্রায় ৪০ বিঘা আয়তনের একটি বড় পুকুর এখন হয়ে উঠেছে পাখির অভয়াশ্রম। এখানে বছরের বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে দেখা মেলে শত শত পাখির। প্রাণ ফিরে পেয়েছে গ্রামীণ পরিবেশ, আর নতুন করে ভাবনায় এসেছে জলবায়ুর ভূমিকা। গ্রামীণ পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি
মাছের পুকুর এখন পাখিদের মিলনমেলা
বড় আয়তনের এই পুকুরে মূলত নানা জাতের মাছ চাষ করা হয়। তবে শুষ্ক মৌসুমে যখন পানি কমে আসে, তখন পুকুরের মাছ ও শামুক সহজলভ্য হয়ে পড়ে। ঠিক এই সময়েই আসে পাখিদের ঝাঁক।
শামুকখোল, বিভিন্ন প্রজাতির বকসহ অসংখ্য জলচর পাখি এখানে খাবারের খোঁজে ভিড় জমায়। সকালে পাখির কলরব আর বিকেলে ঝাঁকে ঝাঁকে ওড়ার দৃশ্য গ্রামবাসীদের কাছে যেন এক অনন্য অভিজ্ঞতা। পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন বিস্ময়ে দেখে, কীভাবে শত শত পাখি একত্র হয়ে নরম বাতাসে ডানা মেলে দেয়।
পরিবেশের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত
গ্রামীণ পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির আগমন কেবল চোখের আরাম নয়, বরং এটি পরিবেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
পাখিরা যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে আসতে পারে, সেখানে প্রাকৃতিক খাদ্যচক্র সঠিকভাবে কাজ করছে বলেই বোঝা যায়। এটি স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের সুস্থতার ইঙ্গিত দেয়। জলচর পাখিরা শামুক, ছোট মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। গ্রামীণ পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি
এছাড়া, পাখির উপস্থিতি পুকুরের জীববৈচিত্র্য বাড়ায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের সময়েও টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পাখির আগমন
বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। অনেক পাখি তাদের ঐতিহ্যবাহী বাসস্থান হারাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে গ্রামীণ পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির সমাগম আমাদের আশাবাদী করে। এটি দেখায় যে, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে পারি।
যদি দেশের অন্যান্য গ্রামেও এমন পুকুর এবং জলাশয় সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে অনেক বিপন্ন প্রজাতির পাখি নতুন আশ্রয় পেতে পারে।
সবাই মিলে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসুন
গ্রামীণ পরিবেশকে বাঁচাতে এবং পাখিদের নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
পুকুর, বিল ও জলাশয়গুলোকে সংরক্ষণ করা, জলদূষণ রোধ করা এবং পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। পরিবেশ রক্ষা মানে শুধু প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ব পালন নয়, নিজের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করাও বটে।
শেষ কথা
গ্রামীণ পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি — এটি কেবল একটা দৃশ্য নয়, এটি আমাদের জন্য একটি বড় বার্তা। পরিবেশ ও জলবায়ুর প্রতি যত্নবান হলে প্রকৃতি নিজেই আমাদের পুরস্কৃত করে।
আপনিও কি এমন পাখির মেলা দেখেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন কমেন্টে! আর পরিবেশ রক্ষার এই প্রয়াস ছড়িয়ে দিতে বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না! 🌿🕊️