25.4 C
Bangladesh
শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫
spot_img

বর্ণিল ফুলে সজ্জিত শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক: এক নতুন প্রাকৃতিক আর্কিটেকচার

বাংলাদেশের গ্রীষ্মকাল মানেই প্রকৃতির এক অপূর্ব রঙিন প্রদর্শনী। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, জারুল—এই বর্ণিল ফুলগুলো একে একে শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সড়কের দুই পাশে রঙ ছড়িয়েছে। সড়কটির দুই পাশের ফুলগুলো এখন একে অপরকে ছাপিয়ে প্রকৃতির এক অপরূপ ক্যানভাসের রূপ নিয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার এই সড়কটি বর্তমানে শুধু স্থানীয়দের নয়, দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এক নতুন প্রাকৃতিক আর্কিটেকচার

প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন এখানে ভিড় করছেন শত শত মানুষ। কেউ পরিবার নিয়ে আসছেন, কেউ আসছেন বন্ধুদের সাথে, এবং কেউ তো ছবি তুলে স্মৃতি ধরে রাখতে চান। বিশেষত, তরুণ-তরুণীরা তাদের স্মার্টফোনে ছবির সেলফি তুলে এই স্মৃতিকে চিরকাল ধরে রাখতে ব্যস্ত।

বর্ণিল ফুলের সাথে মানুষের সংযোগ

প্রতিদিন এই সড়কটি দিয়ে হাঁটতে বের হওয়া মানুষদের মধ্যে অনেকেই এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছেন। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কের দুই পাশের ফুলের গাছের মাঝে হাঁটা, ছবি তোলা, এবং বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ছবি পোস্ট করাই এখন অনেকের জন্য এক আনন্দদায়ক অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক নতুন প্রাকৃতিক আর্কিটেকচার

মৌসুমী আক্তার, একজন দর্শনার্থী, জানান, “এই ফুলের সৌন্দর্য এতই মুগ্ধকর যে, আমি শুধু ফেসবুকে ছবিই দেখছিলাম। অবশেষে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসে নিজের চোখে দেখে গেলাম। এটি অনেক বেশি সুন্দর, এবং পাখিদের ডাক এখানকার পরিবেশকে আরও রোমান্টিক করে তুলেছে।”

পলাশ বিশ্বাস নামের একজন তরুণও বলেন, “শ্রীমঙ্গল এমনিতেই সুন্দর, তবে ফুলের কারণে এখানকার সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে। আমরা বন্ধুরা মিলে এখানে এসেছি, এবং এখানে সময় কাটিয়ে দারুণ অনুভব করছি।”

ফুলের গাছের ইতিহাস: কে শুরু করেছিল এই উদ্যোগ?

এই ফুলের গাছের সৌন্দর্য একদিনের ফল নয়। প্রায় ১০ বছর আগে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের দুই পাশে প্রথম ফুলের গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ফিনলে টি’র চা-বাগানের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ শিবলী নিজ উদ্যোগে এই উদ্যোগ শুরু করেছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং অর্থায়নে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুল, সোনালু ইত্যাদি গাছগুলোর চাষ শুরু হয়। বাগানের শ্রমিকরা নিয়মিতভাবে এই গাছগুলোর পরিচর্যা করে আসছেন, এবং এখন এসব গাছ ফুলে পরিপূর্ণ হয়ে সড়কটিকে একটি নতুন রূপ দিয়েছে।

গোলাম মোহাম্মদ শিবলী প্রথম আলোকে বলেন, “প্রায় ১০ বছর আগে এই উদ্যোগ শুরু করেছিলাম। রাস্তার দুই পাশে গাছ লাগিয়ে আসলে আমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়াতে চেয়েছিলাম। আজ সেই গাছগুলোতে ফুল ফুটছে এবং পুরো রাস্তার চিত্র পাল্টে গেছে। এটা আমাকে খুব আনন্দিত করে।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ

২০২৩ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনও এই ফুলের গাছের সৌন্দর্য আরও বাড়ানোর জন্য কাজ শুরু করেছে। প্রায় ৪ কিলোমিটার জায়গায় ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে, এবং কিছু জায়গায় এসব গাছের ফুল ফুটতে শুরু করেছে। প্রশাসনের এই উদ্যোগ প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করছে এবং স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

ফুলের সৌন্দর্য এবং পরিবেশের গুরুত্ব

এই ফুলের গাছ শুধু সৌন্দর্য যোগ করছে না, এটি স্থানীয় পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফুলের গাছগুলো বায়ু প্রশমিত করতে সাহায্য করছে, এবং এর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখা শুধু মানুষের মনের জন্য নয়, বরং পরিবেশের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতেও সহায়ক।

অন্তিম কথা: প্রকৃতির সৌন্দর্যকে রক্ষা করা জরুরি

এখন, যখন আমরা এই সুন্দর সড়কটি দেখে আনন্দিত হচ্ছি, আমাদের উচিত এই প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরও সুরক্ষিত রাখা। স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে এই ধরনের উদ্যোগ আরও বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের পরিবেশ আরও সুস্থ থাকবে। ফিনলে টি’র মতো অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষার দিকে মনোযোগী হওয়া সময়ের দাবি।

অতএব, প্রকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসুন, এবং এই সুন্দর পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য একযোগে কাজ করি।

এখনই সময়! আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করুন, পাশাপাশি পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হোন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ