25.4 C
Bangladesh
শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫
spot_img

রিজওয়ানা হাসানের অঙ্গীকার: পলিথিনের বিকল্প পাট-কাপড়ের ব্যাগ মিলবে সুলভে

পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার যখন বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার এক গুরুত্বপূর্ণ পথের সন্ধান দিলেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, পলিথিনের টেকসই বিকল্প হিসেবে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ সুলভ মূল্যে সাধারণ ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এর মূল লক্ষ্য হলো মানুষের দীর্ঘদিনের অভ্যাসে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রাকে উৎসাহিত করা। রিজওয়ানা হাসানের অঙ্গীকার

সরকারের নতুন উদ্যোগ: সুলভে বিকল্প ব্যাগ সরবরাহ

মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের হলরুমে ‘প্লিজ প্রজেক্টের’ ‘ন্যাশনাল নলেজ শেয়ারিং ওয়ার্কশপ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, “আমরা সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়েছি যে আমরা পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ যেগুলো আমরা যুব সম্প্রদায়কে দিয়ে বা পাটকল যারা করেন, তাদেরকে বলে দেব যেন আমাদেরকে ওগুলো বানিয়ে দেন সুলভ মূল্যে ক্রেতাদের দিতে পারি।” এই উদ্যোগ সফল হলে সাধারণ মানুষের জন্য পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করা আরও সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। রিজওয়ানা হাসানের অঙ্গীকার

বড় শপিং মলগুলোর যুক্তি: একটি ভ্রান্ত ধারণা?

পলিথিনের বিকল্প ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রায়শই একটি যুক্তি শোনা যায় যে ক্রেতারা নাকি বেশি দামে বিকল্প ব্যাগ কিনতে আগ্রহী নন। রিজওয়ানা হাসান এই ধারণাকে তীব্রভাবে খণ্ডন করেন। তিনি এসময় কিছু বড় শপিং মলের যুক্তি খণ্ডন করেন। তাদের দাবি, ক্রেতারা নাকি ৪০ টাকা দিয়ে পাটের ব্যাগ কিনতে চান না। রিজওয়ানা হাসান এই যুক্তিকে ‘ভ্রান্ত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এ ক্রেতারাই যখন বিদেশে যায়, তখন কিন্তু তারা কোনো দিনও একটা ব্যাগ সস্তা পায় না, ফ্রি পায় না। তাদেরকে কিন্তু ৩-৪ ডলার দিয়ে কিনতে হয়।” অর্থাৎ, সচেতনতা এবং প্রয়োজনীয়তা তৈরি হলে মানুষ ঠিকই পরিবেশবান্ধব পণ্যের জন্য মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হয়, যেমনটা তারা বিদেশে করে থাকে।

বাংলাদেশের বর্জ্য পরিস্থিতি: এক ভয়াবহ চিত্র

দেশের প্লাস্টিক বর্জ্য পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে এক নাম্বারে রয়েছে। সকল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেই আমাদের অবস্থা করুণ। এই পরিস্থিতি আমাদের পরিবেশের জন্য এক মারাত্মক হুমকি। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, সরকার এই পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণে জোর দেওয়া হচ্ছে।

সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার একই সঙ্গে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বাজার থেকে ধীরে ধীরে তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পদক্ষেপ পরিবেশ দূষণ কমানো এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। রিজওয়ানা হাসানের অঙ্গীকার

নিষেধাজ্ঞা কেন জরুরি? অন্য দেশের অভিজ্ঞতা

পরিবেশ উপদেষ্টা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “পলিথিন এবং সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক যদি আমরা বন্ধ করতে পারি, তাহলে জাতিগতভাবে যে আমরা দায়িত্বশীল- এটা আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি আফ্রিকার দেশ তানজানিয়া পারে, যদি আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডা পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না? শুধু পলিথিন শপিং ব্যাগ নয়, যেগুলো খুব প্রয়োজনীয় নয় এবং বাজারে সহজেই বিকল্প পাওয়া যায়, এমন অন্যান্য সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। জুন মাসের পর এ ধরনের প্লাস্টিক বাজারে আনার ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে তিনি জানান। এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ, যা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আগে নিষেধাজ্ঞা: যুক্তির সপক্ষে বক্তব্য

যারা বলেন আগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করে পরে প্লাস্টিক ব্যান করা উচিত, তাদের যুক্তি খণ্ডন করে তিনি বলেন, “যদি আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকাই, তাহলে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তেমন বড় সমস্যা নেই। ইউরোপের কি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় খুব সমস্যা আছে? তারপরেও ইউরোপ কিন্তু কতগুলো সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যান করে দিয়েছে।” এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এগুলোকে রিসাইকেল করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আফ্রিকান দেশগুলোও একই কারণে ব্যান করেছে, কারণ তারা জানে অন্য বর্জ্য পচে গেলেও প্লাস্টিক ও পলিথিনের ক্ষেত্রে সেটা হওয়ার কোনো উপায় নেই। এই বিষয়টি পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাবকে তুলে ধরে এবং কেন দ্রুত নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন, তার যৌক্তিকতা প্রমাণ করে।

জনগণের অংশগ্রহণ ও অভ্যাস পরিবর্তন: সাফল্যের চাবিকাঠি

এই মহৎ উদ্যোগে সকলের অংশগ্রহণ কামনা করে উপদেষ্টা বলেন, “আপনাদের সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে সরকারি উদ্যোগগুলোতে নিজ নিজ জায়গা থেকে অংশ নেন। আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসকে আমাদের একটু বদলাতে হবে।” তিনি মনে করিয়ে দেন, যখন মানুষ নিজে থেকে বুঝতে শিখবে, একইভাবে সরকারও আইন প্রয়োগ করতে এগোবে, তখনই প্রকৃত পরিবর্তন আসবে। সুপারশপগুলোতে পলিথিনের ব্যাগ না থাকা এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে অভ্যাসের পরিবর্তন আসা—এগুলোকে তিনি অবশ্যই সফলতা হিসেবে দেখছেন এবং এই পরিবর্তনকে টেকসই করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

অন্যান্য বিকল্প পণ্য উৎপাদনে নির্দেশনা

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বাংলাদেশ ফরেস্ট রিসার্চ ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনকে (বিফিআইডিসি) একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে মনোযোগ দিতে এবং রাবার থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসে বাঁশ ও বেতের পণ্য তৈরির দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। এটি পরিবেশবান্ধব স্থানীয় শিল্পের বিকাশে সহায়ক হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, ইউএনওপিএস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরলীধরন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম প্রমুখ।

শেষ কথা: আমাদের করণীয়

পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন বর্জন এখন সময়ের দাবি। সরকার বিকল্প সহজলভ্য করার উদ্যোগ নিচ্ছে, এখন আমাদের পালা। দৈনন্দিন কেনাকাটায় পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষা করবে না, বরং দেশের পাট শিল্পের পুনরুজ্জীবন এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতেও সহায়তা করবে। নিজে সচেতন হোন এবং অন্যদেরও সচেতন করুন। আপনার ছোট একটি পদক্ষেপ পারে আমাদের পরিবেশকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে।

আসুন, আমরা সবাই মিলে এই মহৎ উদ্যোগে শামিল হই এবং একটি পলিথিনমুক্ত, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি!

আপনার মতামত জানান: পলিথিনের বিকল্প ব্যবহারে সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে আপনার কী মনে হয়? আপনি কি নিয়মিত পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করেন? কমেন্ট করে আমাদের জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ