সাধারণত থোকায় থোকায় রসালো আঙুর দেখলে ইতালির বা ক্যালিফোর্নিয়ার সূর্যের আলো ঝলমলে আঙুর ক্ষেতের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু আমি যদি বলি, এই দৃশ্য এখন বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে? নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় সজীব চৌধুরী তার শখের ছাদবাগানকে এক অত্যাশ্চর্য রূপ দিয়েছেন। এটি শুধু তার বাগানবিদ্যার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সম্ভাবনারও ইঙ্গিত দেয়। ছাদবাগানে থোকায় থোকায় আঙুর
শখের শুরু:
ফতুল্লা বিসিক এলাকার বাসিন্দা সজীব চৌধুরী শখের বশে তার বাসার ছাদে একটি বাগান তৈরি করেছেন। তিনি আঙুরের চারা রোপণ করেন। বর্তমানে তার বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় আঙুর ঝুলছে। বাণিজ্যিকভাবে এখনো এর ফলন শুরু না হলেও, এই বাগান থেকে পরিবারের চাহিদা অনেকটাই মেটানো সম্ভব হচ্ছে। এই ব্যতিক্রমী বাগানটি শহীদুল ইসলামের চারতলা ভবনের ছাদে অবস্থিত। শহীদুল ইসলাম সম্পর্কে তার বোনের স্বামী। সেই সুবাদে সজীব তার বাসার ছাদে এই বাগানটি তৈরি করেছেন। আঙুর ছাড়াও এই বাগানে ডালিম, আম, আমলকি, পমেলো ও বারোমাসি কাঁঠালসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ রকমের দেশি-বিদেশি ফলের গাছ রয়েছে। এই গাছগুলো দিয়ে পুরো ছাদটি সবুজে ভরে উঠেছে। আঙুর গাছের ডালগুলোতে ঝুলছে থোকা থোকা আঙুর। দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় আশেপাশের লোকজন প্রায়ই বাগানটি দেখতে আসেন, কেউ কেউ আবার বাগান করার আগ্রহও প্রকাশ করেন।
শুরু যেভাবে:
সজীব চৌধুরী বলেন, “আমি মূলত শখের বসেই এই বাগান শুরু করেছিলাম। লাভের আশা আমি কখনো করিনি। আগে আমি প্রবাসে থাকতাম। সেখানে বাগান বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। তখন থেকেই আমার মনে বাগান করার ইচ্ছা ছিল। যখন স্থায়ীভাবে দেশে ফেরার চিন্তা করি, তখন বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। সেই সাথে আমার পছন্দের ফল আঙুরকে বেছে নেই এবং আঙুরের বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই।” ছাদবাগানে থোকায় থোকায় আঙুর
সংগ্রহ ও জ্ঞান বিতরণ:
সজীব তার বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে আঙুরের চারা সংগ্রহ করেন। তিনি নিউক্রেন, ইতালি, তুরস্ক ও জাপান থেকে বিভিন্ন উপায়ে ১৬৩ জাতের আঙুর সংগ্রহ করেছেন। তিনি জানান, আঙুর গাছে ফল ধরতে কমপক্ষে তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, “আমার কাছে এখন যে পরিমাণ কালেকশন আছে, আমি সেগুলো এখন ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। সেই লক্ষ্যে ফেসবুকে ‘সাজ গার্ডেন’ নামে একটি গ্রুপ খোলা হয়েছে। আমাদের এই গ্রুপে অনেক বাগানি আছেন। তারা অনেকেই আমাদের কাছ থেকে বিনামূল্যে এই গাছগুলো সংগ্রহ করছেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা এগুলো উপহার হিসেবে দিয়ে থাকি।”
ছাদের মনোরম পরিবেশ ও একটি কমিউনিটি:
সাজ গার্ডেনের অ্যাডমিন মৌসুমী জাহান নুপুর বলেন, “ছাদবাগানে একটা মনোরম পরিবেশ রয়েছে। এখানে আসলেই মন ভালো হয়ে যায়। মানুষের অনেক রকম স্বপ্ন থাকে। তেমনি সজীব চৌধুরীর একটি স্বপ্ন হচ্ছে এই ছাদবাগান। তিনি আমাদের ছাদবাগান সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নতুন যারা বাগান করছেন, তিনি তাদের গাছ উপহার দিয়ে সাহায্য করেন।” ছাদবাগানে থোকায় থোকায় আঙুর
স্থানীয় মতামত ও বৃহত্তর প্রেক্ষাপট:
নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, আমাদের দেশে আগে থেকেই আঙুর উৎপাদন হয়। তবে মিষ্টি হওয়ার বদলে টক হয়ে যায়। এখানে যে আঙুর চাষ করা হচ্ছে, সেটি নাকি মিষ্টি। যদি মিষ্টি হয়, তাহলে খুবই ভালো।
কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ (এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে এর সম্পর্ক):
সজীবের ছাদবাগান শুধু একটি সুন্দর শখ নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে মানিয়ে নেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এর কারণগুলো হলো:
শহুরে সবুজ স্থান বৃদ্ধি: সজীবের ছাদবাগানের মতো বাগানগুলো শহরের উষ্ণতা কমাতে সাহায্য করে।
খাদ্য নিরাপত্তা: স্থানীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে দূর থেকে খাদ্য আনার প্রয়োজনীয়তা কমে, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সাহায্য করে।
কার্বন শোষণ: গাছপালা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, যা গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব কমাতে সাহায্য করে।
আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ: গাছপালা তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা পরিবেশের জন্য সহায়ক।
আপনি কী করতে পারেন?
সজীবের গল্প অনুপ্রেরণাদায়ক। এটি প্রমাণ করে যে ছোট ছোট পদক্ষেপও পরিবর্তন আনতে পারে।
একটি ছাদবাগান শুরু করুন: ছোট একটি স্থানও সবুজে ভরে তুলতে পারেন।
স্থানীয় কৃষকদের সমর্থন করুন: স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্য কিনুন।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জানুন: এই চ্যালেঞ্জ এবং এর সমাধান সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করুন।
অনলাইন কমিউনিটিতে যোগ দিন: অন্যান্য বাগানীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আপনার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময় করুন।
সজীব চৌধুরীর ছাদবাগানে থোকায় থোকায় ঝুলন্ত আঙুর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার শক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও পরিবেশের উন্নতির জন্য উদ্ভাবনী সমাধানের সম্ভাবনা প্রমাণ করে। আসুন আমরা সবাই তার প্রচেষ্টা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে একটি সবুজ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার পথে এগিয়ে যাই।
ছাদবাগান নিয়ে আপনার চিন্তা কী? নিচে মন্তব্য করে আপনার অভিজ্ঞতা ও মতামত জানান।