বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ক্রমাগত ক্ষতিপূরণের দাবি জানালেও কপ২৯ সম্মেলন সেই দাবিগুলোর সুরাহা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আজারবাইজানের বাকুতে চলমান কপ২৯ জলবায়ু সম্মেলন একাধিক আলোচনার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে, কিন্তু অর্থায়নের ইঙ্গিত এখনও অনিশ্চিত। উন্নত দেশগুলো শর্তসাপেক্ষ ঋণ ও সবুজ শিল্পে বিনিয়োগের কথা বললেও, ক্ষতিপূরণ নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালনে দৃঢ় কোনো উদ্যোগ নেই।
উন্নত দেশগুলোর মনোভাব
কপ২৯ সম্মেলনে জলবায়ু ক্ষতিপূরণের আলোচনা বারবার থমকে যাচ্ছে উন্নত দেশগুলোর উদাসীনতায়। তারা প্যারিস চুক্তির আওতায় ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। পরিবেশগত দুর্যোগে ভোগা দেশগুলোকে শর্তযুক্ত ঋণ নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এই শর্ত মেনে চলার মতো সক্ষমতা রাখে না।
বাংলাদেশসহ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বলেছেন, ক্ষতিপূরণের কোনো কার্যকর পরিকল্পনা বা অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি এখনও পাওয়া যায়নি। বরং উন্নত দেশগুলো পরিস্থিতিকে এড়িয়ে যেতে চাইছে।
ফেনীর বন্যার ভয়াবহতা তুলে ধরা
কপ২৯-এর মঞ্চে ফেনীর সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার চিত্র তুলে ধরা হয়। এই বন্যায় দেখা যায়, কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন একটি দেশের প্রাকৃতিক এবং সামাজিক অবকাঠামোকে ধ্বংস করতে পারে। স্থানীয় মানুষ, বিশেষত তরুণরা, বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে এলেও এই চিত্র বিশ্ববাসীর কাছ থেকে তেমন সহানুভূতি পায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অর্থ নয়, তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। ফেনীর অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তরুণদের সম্পৃক্ত করা হলে তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অর্থায়ন: কেন প্রয়োজন এবং কী বাধা
জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় অর্থায়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো বছরের পর বছর ধরে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আসছে। জাতিসংঘের মতে, এসব দেশকে বছরে অন্তত দুই হাজার কোটি ডলার তহবিল দিতে হবে। তবে, উন্নত দেশগুলো এক বিলিয়ন ডলার দিতেও রাজি নয়।
অর্থায়নের অনিশ্চয়তা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আরও বিপাকে ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো এবং পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য সরাসরি অনুদান প্রয়োজন। কিন্তু উন্নত দেশগুলো শর্তযুক্ত ঋণ আরোপ করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
নাজুক দেশগুলোর দাবি
কপ২৯-এ অংশ নেওয়া দ্বীপরাষ্ট্র এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো সরাসরি ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। তারা বলছে, সমুদ্রস্তর বৃদ্ধির ফলে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া, বনাঞ্চল থাকা দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমাতে বন রক্ষায় আরও বেশি অর্থ চেয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়ে সম্মেলনে যে আলোচনা চলছে, তার গতি অত্যন্ত ধীর। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এই সম্মেলন থেকেও কোনো প্রাপ্তি ছাড়াই ফিরে আসতে পারে।
জলবায়ু অর্থায়ন: একটি নৈতিক দায়িত্ব
কপ২৯ সম্মেলনের বর্তমান বাস্তবতায় জলবায়ু অর্থায়নের কোনো নিশ্চিত ইঙ্গিত না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো হতাশ। উন্নত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। এভাবে দায় এড়ানো শুধু বৈষম্যকেই বৃদ্ধি করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সমন্বিত পদক্ষেপের বিকল্প নেই। সম্মেলনের অগ্রগতির জন্য বিশ্বনেতাদের আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।