27.6 C
Bangladesh
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
spot_img

পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট: মহাকাশ ভ্রমণ কি এখন আমাদের হাতের নাগালে?

মহাকাশ ভ্রমণ, একটি সময় ছিল যখন এটি কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় বা সামরিক প্রকল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। খরচ এতটাই বেশি ছিল যে সাধারণ মানুষের জন্য এটি ছিল কল্পনারও বাইরে। প্রচলিত রকেট প্রযুক্তি ছিল মূলত একবার ব্যবহারযোগ্য। প্রতিটি উৎক্ষেপণের পর রকেটগুলো ধ্বংস হয়ে যেতো, ফলে প্রতিটি মিশনের জন্য নতুন রকেট তৈরি করতে হতো, যা ব্যয়কে বিপুলভাবে বাড়িয়ে দিত। পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট

কিন্তু ২০১৫ সালে একটি নতুন যুগের সূচনা হলো, যখন স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন ৯’ রকেট ইতিহাস সৃষ্টি করল। এটি পৃথিবীর বুকে সফলভাবে অবতরণ করল, যা আগে কখনও হয়নি। এই পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেটের সাফল্য মহাকাশ গবেষণাকে এক নতুন মাত্রা দিল।

কেন পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ?

পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল খরচ কমানো। প্রচলিত রকেটগুলোর মতো এটি একবার ব্যবহার করার পর ফেলে দেওয়া হয় না। বরং, একটি মিশন শেষে রকেটটি মেরামত করে আবারও ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়া মহাকাশ ভ্রমণের খরচ প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে।

ফ্যালকন ৯ রকেটে এমন উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়েছে যা অবতরণের সময় রকেটের গতিপথ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই প্রযুক্তি নিশ্চিত করেছে যে রকেটগুলো নির্দিষ্ট স্থানে নিরাপদে অবতরণ করতে পারবে, যা আগের প্রচলিত রকেটের চেয়ে বহুগুণ কার্যকরী।

স্পেসএক্স এবং ব্লু অরিজিনের ভূমিকা

স্পেসএক্সের পাশাপাশি অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের কোম্পানি ‘ব্লু অরিজিন’ও পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তিতে তাদের অবদান রাখছে। তাদের ‘নিউ শেপার্ড’ রকেট মহাকাশ পর্যটনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ২০২১ সালে এটি প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে সফল মিশন সম্পন্ন করেছে। ব্লু অরিজিনের এই সাফল্য সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণের পথ সুগম করেছে।

পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি

পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেটগুলো কেবল খরচই কমাচ্ছে না, বরং পরিবেশের দিক থেকেও বেশ উপকারী। প্রচলিত রকেট উৎক্ষেপণের পর সমুদ্র বা মহাকাশে আবর্জনা ফেলত। কিন্তু পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট এসব সমস্যা দূর করেছে। মহাকাশে বা সমুদ্রে বর্জ্য না ফেলায় পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব কমছে।

নাসার ‘আর্টেমিস প্রোগ্রাম’-এর মতো প্রকল্পে এই রকেটগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য চাঁদে মানুষ পাঠানো। পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেটের সাহায্যে এই অভিযানগুলো আরও সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হবে।

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

যদিও প্রতিটি মিশনের পর রকেটগুলোর কিছু পরীক্ষা ও মেরামত প্রয়োজন হয়, তবুও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া আরও দক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য হচ্ছে। স্পেসএক্স ইতোমধ্যে তাদের কিছু রকেট ১০ বারেরও বেশি ব্যবহার করেছে। এই অভাবনীয় সাফল্য প্রমাণ করে যে পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তি মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

এই প্রযুক্তি কেবলমাত্র বিজ্ঞানীদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও মহাকাশ ভ্রমণকে সহজলভ্য করছে। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপন এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য গ্রহে বসতি স্থাপনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে।

উপসংহার

পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তি কেবলমাত্র মহাকাশ ভ্রমণের খরচ কমাচ্ছে না, বরং এটি একটি পরিবেশবান্ধব সমাধানও। মহাকাশ ভ্রমণকে সাশ্রয়ী করে সাধারণ মানুষের জন্য আরও সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

আপনি যদি মহাকাশ ভ্রমণ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে আরও জানতে চান, তাহলে আমাদের ব্লগটি সাবস্ক্রাইব করুন। মন্তব্য করে আপনার মতামত জানান এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন নতুন নতুন তথ্যের জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ