জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী আলোচিত একটি বিষয়, যা বিভিন্ন প্রভাব সৃষ্টি করছে পরিবেশে। কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং তার পরিণতি নিয়ে মানুষের ধারণা বেশিরভাগ সময়ই বিভ্রান্তিকর। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নতুন বই, Sea Level: A History, এই সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে এবং সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। এই বইয়ের মাধ্যমে লেখক উইলকো গ্রাফ ভন হার্ডেনবার্গ বুঝিয়েছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা মাপার প্রক্রিয়া একেবারে সহজ ছিল না, এবং কীভাবে গত কয়েক শতাব্দী ধরে এই বিষয়টি এক জটিল বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব
সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা মাপার ইতিহাস
সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা (Mean Sea Level) হল সমুদ্রের পৃষ্ঠের গড় স্তর। এটি খুবই মৌলিক, কিন্তু মাপার জন্য প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন এবং বহুমুখী। বইয়ে হার্ডেনবার্গ জানিয়েছেন, প্রাচীনকালে সমুদ্রপৃষ্ঠের মাপ যথাযথভাবে নির্ধারণ করতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। এটির জন্য মিশ্রিত উপকূলে যন্ত্রপাতি বসানো, অসম্পূর্ণভাবে তথ্য সংগ্রহ করা এবং বিভিন্ন দ্বীপাঞ্চলে পর্যবেক্ষণ করা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি ছিল এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর প্রাচীন গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলি সম্পূর্ণভাবে পরিমার্জিত হয়েছে। মুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব
গ্লেসিয়ার গলন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব
গ্লেসিয়ার গলন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির একটা মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের দিনে, বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে ১৮৮০ সাল থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ৮-৯ ইঞ্চি বেড়েছে। গ্লেসিয়ার গলন এবং সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হচ্ছে মূলত মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। এর ফলশ্রুতিতে বহু উপকূলীয় শহর ও দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বিপদের মুখে পড়তে পারে, যার মধ্যে মায়ামি, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত।
ভবিষ্যদ্বাণী এবং বিপদ
বইয়ের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ অন্তত ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাবে এবং ২১০০ সালের মধ্যে এটি এক মিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বিশেষত মায়ামি শহরের মতো শহরগুলি, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছে অবস্থান করছে, এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশ, যা একটি ডেল্টা অঞ্চল, এ ধরনের বিপদে অত্যন্ত প্রবণ। এর পাশাপাশি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের একে অপরকে বাড়িয়ে দেয়, এবং এতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে পৃথিবীজুড়ে।
বিজ্ঞান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা: trial and error
এই বইটি বিজ্ঞান এবং তার উন্নয়নের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছে। যদিও আধুনিক স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও টেকনিক্যাল সিস্টেম সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিমাপ আরও নির্ভুল করতে সাহায্য করেছে, কিন্তু সেগুলি এখনও পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। লেখক জানাচ্ছেন, আজও পৃথিবীজুড়ে অধিকাংশ পর্যবেক্ষণ প্রথাগত এবং মাটিতে স্থাপিত যন্ত্রপাতির উপর নির্ভরশীল, এবং এগুলোর সাহায্যে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব। এর ফলে, বিজ্ঞানীরা আরও নির্ভুলভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছেন।
বইটির গুরুত্ব: Sea Level: A History
হার্ডেনবার্গের বইটি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। এটি শুধু প্রযুক্তি বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং ইতিহাস, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের দীর্ঘ প্রচেষ্টার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং এর কারণে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Call-to-Action: এই বইটি সম্পর্কে আপনার কী ধারণা? সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে আপনার চিন্তা শেয়ার করুন! মন্তব্যে আপনার মতামত জানান এবং আরও তথ্যের জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন।
#নতুন_বই #সমুদ্রপৃষ্ঠের_উচ্চতা_বৃদ্ধি #জলবায়ু_পরিবর্তন #SeaLevel #ClimateChange #WilkoGrafvonHardenberg #GlobalWarming #ClimateAwareness #ClimateChangeHistory