সুইস সংস্থা আইকিউ এয়ার ২০২৪ সালের সবচেয়ে দূষিত শহর ও দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় ভারতের বার্নিহাট শহর এক নম্বরে অবস্থান করছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তকমা পেয়েছে। দিল্লি, ভারতের রাজধানী, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী শহর হিসেবে পরিচিত, সেটি অবশ্যই আলোচনায় থাকে, তবে বার্নিহাটে বায়ু দূষণ নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে বার্নিহাটের নাম উঠে এসেছে। দিল্লির চেয়েও দূষিত
বার্নিহাট: ভারতের অজানা দূষিত শহর
বার্নিহাট শহরটি আসাম ও মেঘালয়ের সীমানায় অবস্থিত একটি ছোট শিল্প শহর। এটি এক্সপোর্ট প্রমোশন অঞ্চলের অন্তর্গত, যেখানে ৪১টিরও বেশি শিল্পকারখানা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে লৌহ ও ইস্পাত কারখানা, পানীয় জল ও ঠান্ডা পানীয়ের কারখানা, এবং সিমেন্টের কারখানা। এসব কারখানা থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে দূষণ ছড়ায়, যা স্থানীয় পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বায়ুদূষণের পরিমাণ এখানে বরাবরই উদ্বেগজনক। বিশেষত, শিল্প এলাকা হওয়ায় এবং এখানকার কারখানাগুলোর কার্যকলাপের কারণে দূষণের মাত্রা প্রতি মুহূর্তে বৃদ্ধি পায়। বার্নিহাটের বায়ু প্রতিদিন অনেকাংশে দূষিত হয়ে থাকে, যার প্রভাব এখানকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর মারাত্মকভাবে পড়ছে।
কারখানা ও যানবাহন: দূষণের মূল কারণ
বার্নিহাটের বায়ুদূষণের পেছনে অন্যতম কারণ হলো এখানে থাকা বিভিন্ন বড় শিল্পকারখানা। বিশেষ করে সিমেন্টের কারখানাগুলোর ভূমিকা এখানে উল্লেখযোগ্য। এগুলো থেকে উড়ন্ত ধূলিকণার সৃষ্টি হয়, যা বায়ুর মানকে আরো নীচে নামিয়ে আনে। এছাড়াও, বিভিন্ন ট্রাক ও ম্যাটাডোরের চলাচল এই দূষণের পরিমাণকে আরও বাড়িয়ে দেয়। বড় ট্রাকগুলো নিয়মিত ভাবে এই শহরের রাস্তা দিয়ে চলাচল করে, যা প্রচুর কার্বন ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। দিল্লির চেয়েও দূষিত
এর পাশাপাশি, রাস্তার পাশে পাহাড়ি এলাকা থাকার কারণে, দূষিত বায়ু সহজে শহরের বাইরে চলে যেতে পারে না। ফলে, শহরের ভেতরের বায়ু মান আরো খারাপ হয়ে যায়।
বার্নিহাটের ভূগোল: দূষণের ছড়িয়ে পড়ার বাধা
বার্নিহাটের চারপাশে পাহাড় রয়েছে, যার ফলে এখানে বায়ু দূষণ অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে না। পাহাড়ি এলাকা বায়ু চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, এবং এর ফলে দূষিত বায়ু শহরের ভিতরে আটকে থাকে। এ কারণে, শহরের মধ্যে বায়ু দূষণের পরিমাণ অনেক বেশি।
দৃষ্টিহীন দূষণ: বার্নিহাটের চুপিসারে বাড়তে থাকা সমস্যা
বার্নিহাটের দূষণের বিষয়ে সাধারণ মানুষ খুব একটা জানে না। দিল্লি বা মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরগুলোর তুলনায় বার্নিহাটে এত বেশি আলোচনা বা সচেতনতা নেই। তবুও, এর আশেপাশে হাজার হাজার মানুষ বাস করে, যাদের প্রতিদিন বায়ু দূষণের শিকার হতে হচ্ছে।
আসামের প্রাক্তন কাস্টমস অ্যান্ড সেন্ট্রাল এক্সাইজ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার বলেন, “বার্নিহাটের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এখানকার ট্রাক চলাচল এবং সিমেন্টের কারখানাগুলোর অবস্থা আরও খারাপ করছে।”
সমাধান কি?
বার্নিহাটের দূষণ কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিল্পকারখানাগুলোর দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং যানবাহনের নির্গমন পরিমাণ কমানো। তবে, বিশেষভাবে এটি একটা বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে, কারণ এর দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
তবে আশার কথা, বার্নিহাটের কিছু পরিবেশ কর্মী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা সরকারের কাছে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে।
শেষ কথা
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের শিরোপা পাওয়া বার্নিহাটের মতো ছোট শহরগুলির পরিবেশগত অবস্থা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। তবে এই শহরের দূষণ যা শুধু মানুষের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং পরিবেশের জন্যও এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচিত দ্রুত এই শহরের দূষণ কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
আপনি কী মনে করেন? বার্নিহাটের দূষণ কি ভারতের বৃহত্তম শহরগুলোর থেকে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে? আপনার মতামত শেয়ার করুন।