জলবায়ু তহবিলের টাকা: প্রকৃত সমস্যা সমাধানে ব্যবহারের বদলে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয়
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য গঠিত জলবায়ু তহবিলের অর্থ কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই তহবিলের মূল উদ্দেশ্য ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করা, সুপেয় পানি, লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমি পুনরুদ্ধার, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোকে আরও সুরক্ষিত করা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক ক্ষেত্রেই এসব অর্থ বিনোদন পার্ক তৈরি, সড়কবাতি স্থাপন এবং এমনকি ব্যক্তিগত প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে। জলবায়ু তহবিলের টাকা
উদাহরণ: ভান্ডারিয়ার রিসোর্ট এবং বিনোদনকেন্দ্র
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় সরকারি জমিতে জলবায়ু তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত রিসোর্ট এবং বিনোদন পার্ক তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই ধরনের বিনোদন প্রকল্প জলবায়ু পরিবর্তনের আসল প্রভাব মোকাবিলায় কোনভাবেই সহায়ক নয়। তহবিলের টাকায় পুকুরে ওয়াকওয়ে তৈরি, রঙিন মাছ এবং ফোয়ারা স্থাপন করা হয়েছে, যা মূলত স্থানীয় জনগণের বিনোদন ব্যবস্থা উন্নত করতে কাজে আসছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জীবনে এসব প্রকল্পের কোনো বাস্তব প্রভাব নেই। জলবায়ু তহবিলের টাকা
উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর সংকট: সুপেয় পানির ঘাটতি এবং ফসলি জমির ক্ষতি
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাতক্ষীরার মতো এলাকায় মানুষ বহু দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে জীবনযাপন করছেন। এমনকি স্থানীয় মহিলারা এবং শিশুরা এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। জলবায়ু তহবিলের অর্থ এখানকার সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণের কাজে ব্যবহৃত না হওয়ায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। একইভাবে লবণাক্ততার কারণে ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং খাদ্য উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।
বিতর্কিত প্রকল্প: খুলনা ও ভোলায় বিনোদনকেন্দ্রের উন্নয়ন
খুলনার রূপসা এলাকায় জলবায়ু তহবিলের অর্থে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল ইকো পার্ক নির্মাণ এবং ভোলার চরফ্যাশনে জ্যাকব টাওয়ারের মতো বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের বিনোদন প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য জরুরি প্রকল্প গ্রহণ করলে স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নত হতে পারতো। প্রকৃত অর্থে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে ঝুঁকি হ্রাস ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করার মাধ্যমে এসব অর্থের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হতো।
বাস্তব সমস্যা মোকাবিলায় সঠিক নীতিমালার অভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু তহবিলের প্রকৃত প্রয়োজনে ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ নীতিমালা ও তদারকি ব্যবস্থা। নীতিমালার অভাবে তহবিলের অপব্যবহার এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রয়োজনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে এই তহবিলের অপচয় হচ্ছে, যার ফলে প্রকৃত সমস্যা সমাধানে পিছিয়ে পড়ছে দেশ।
সঠিক পদক্ষেপের জন্য সমাধানমূলক প্রস্তাবনা
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন, তহবিল ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও প্রকৃত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ অপরিহার্য। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহায়তায় বাস্তবসম্মত প্রকল্প গ্রহণই হবে জলবায়ু তহবিলের সঠিক ব্যবহার।
CTA: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আপনার মতামত ও পরামর্শ আমাদের জানান। সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য আরও তথ্য পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।