21.5 C
Bangladesh
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
spot_img

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণের পথে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের গতি আমাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত হচ্ছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৪৫ (±০.১২) ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, যা উদ্বেগজনক। মহাসাগরের তাপমাত্রাও ক্রমবর্ধমান, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কার্বন, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২৩ সাল পৃথিবীর উষ্ণতম বছর হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়লেও, অন্যান্য খাতে অগ্রগতি ধীর। এর ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার ক্রমাগত বাড়ছে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত ২৮টি জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও উষ্ণায়নের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে, আগামী নভেম্বরে আজারবাইজানে পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

১৯৯১ সালে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতু প্রথম ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ (ক্ষতি ও লোকসান) ধারণা প্রস্তাব করে। অবশেষে ২৭তম সম্মেলনে এ বিষয়ে তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো কীভাবে ক্ষতিপূরণের দাবি করবে এবং কোন বিষয়গুলো এতে অন্তর্ভুক্ত হবে? এখন পর্যন্ত লস অ্যান্ড ড্যামেজের কোনো একক সংজ্ঞা নেই।

তবে ২০২৩ সালের অ্যাডাপটেশন গ্যাপ রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুটি ক্ষেত্রে এই ধারণা প্রযোজ্য হতে পারে: প্রথমত, যখন ক্ষতি প্রশমনের মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য নয় এবং দ্বিতীয়ত, যখন জলবায়ুর প্রভাব বিশদভাবে মূল্যায়িত হয়েছে। প্রতিবেদনে ‘হার্ড’ ক্ষতি বলতে সরাসরি প্রভাব বোঝানো হয়েছে, আর ‘সফট’ ক্ষতি হচ্ছে অভিযোজনযোগ্য প্রভাব।

লস অ্যান্ড ড্যামেজ দুই ধরনের হতে পারে—অর্থনৈতিক এবং অ-অর্থনৈতিক। অর্থনৈতিক ক্ষতি অর্থমূল্যে নিরূপণ করা সম্ভব, কিন্তু অ-অর্থনৈতিক ক্ষতির মূল্য নির্ধারণ সম্ভব নয়। দেশগুলোকে বলা হয়েছে, তারা ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ স্বচ্ছভাবে তাদের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট দাখিল করবে। তবে তাত্ত্বিকভাবে যেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার বাস্তবায়নে নানা অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে।

ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কাছে আড়াল করছে। ২০০৯ সালে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা এখনো পুরোপুরি ছাড় হয়নি। ২০২০ সাল নাগাদ ৮৩.৩ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ছাড়া হলেও তার মাত্র ৮ শতাংশ পায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

অনেকেই বলছেন, বর্তমান ক্ষতিপূরণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। অনুদানের পরিবর্তে ঋণ দেওয়ার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও বেশি ঋণের চাপে পড়ছে। এতে অভিযোজন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ব্যয় দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে বছরে অভিযোজনের খরচ ২১৫ থেকে ৩৮৭ বিলিয়ন ডলার অনুমান করা হচ্ছে।

ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অভিযোজন খাতে ২০৩৫ সালের মধ্যে ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে, কিন্তু ধনী দেশগুলোর মনোভাব আমাদের জন্য হতাশাজনক। ২০০২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত জলবায়ু উন্নয়ন সহায়তায় ১.২৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। ক্ষতি বেশি হলেও বরাদ্দ কম।

আগের সরকারের সময় একটি জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল তৈরি করা হয়েছিল, যা থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। তবে এসব ব্যয়ের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে জলবায়ু ক্ষতিপূরণের দাবিতে সোচ্চার থাকলেও, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সমীক্ষা ও গবেষণার অভাব আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে।

যথাযথ তথ্যভান্ডার এবং গবেষণা ছাড়া ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও জটিল হবে। এখন সময় এসেছে, বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুততার সঙ্গে সঠিক গবেষণা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতির একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রস্তুত করতে হবে, যাতে বৈশ্বিক তহবিল থেকে আমাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ