শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ (Noise Pollution Control Rules, 2006)
বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য **শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬** প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর আওতায় প্রণীত হয়, এবং এর মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও তার মাত্রা নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিধান দেওয়া হয়েছে।
প্রধান ধারা:
১. শব্দের অনুমোদিত মাত্রা নির্ধারণ:
এই বিধিমালা অনুযায়ী, ভৌগোলিক এলাকা বা কার্যক্রম অনুযায়ী শব্দের অনুমোদিত মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে শব্দের মাত্রা পাঁচটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে:
- নীরব অঞ্চল (Silent Zone):** হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আদালত সংলগ্ন এলাকা। দিনের বেলা সর্বাধিক ৫০ ডেসিবেল (dB) এবং রাতের বেলা ৪০ ডেসিবেল।
- আবাসিক এলাকা (Residential Area):** দিনের বেলা সর্বাধিক ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৪৫ ডেসিবেল।
- মিশ্র এলাকা (Mixed Area):** দিনের বেলা সর্বাধিক ৬০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৫০ ডেসিবেল।
- বাণিজ্যিক এলাকা (Commercial Area):** দিনের বেলা সর্বাধিক ৭০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৬০ ডেসিবেল।
- শিল্প এলাকা (Industrial Area):** দিনের বেলা সর্বাধিক ৭৫ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৭০ ডেসিবেল।
২.গাড়ির হর্ন এবং লাউডস্পিকার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ:
- নীরব অঞ্চলে গাড়ির হর্ন বাজানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- অনুমোদিত সময়ের বাইরে বা অনুমতি ছাড়া উচ্চ শব্দে মাইক, লাউডস্পিকার, সাউন্ড এম্প্লিফায়ার, অথবা মিউজিক বাজানো নিষিদ্ধ।
৩.ইন্ডাস্ট্রি ও নির্মাণ কাজের শব্দ নিয়ন্ত্রণ:
- শিল্প প্রতিষ্ঠান বা নির্মাণ কাজ থেকে নির্গত শব্দকে অনুমোদিত সীমার মধ্যে রাখতে হবে। নির্ধারিত সময়সীমার বাইরে শব্দযুক্ত কার্যক্রম করা যাবে না।
শাস্তি:
১.আইন লঙ্ঘনের শাস্তি:
- যদি কেউ অনুমোদিত শব্দসীমা অতিক্রম করে শব্দ দূষণ ঘটায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে **১ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা জরিমানা, বা উভয় শাস্তি** দেওয়া যেতে পারে।
- পুনরায় অপরাধ সংঘটিত হলে শাস্তি আরও বাড়িয়ে **৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে।
২.লাউডস্পিকার ও হর্ন ব্যবহার সংক্রান্ত শাস্তি:
- নীরব অঞ্চলে হর্ন বাজালে বা অনুমোদিত সময় ছাড়া মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহারে **তৎক্ষণাৎ জরিমানা এবং যন্ত্রপাতি জব্দ** করা হতে পারে।
৩.শিল্প প্রতিষ্ঠান বা নির্মাণ কাজের সময়সীমা লঙ্ঘনের শাস্তি:
- নির্ধারিত সময়সীমার বাইরে নির্মাণ কাজ করলে বা উচ্চমাত্রার শব্দ উৎপন্ন হলে তৎক্ষণাৎ কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে এবং আইন লঙ্ঘনের জন্য **জরিমানা আরোপিত হতে পারে।
বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের আইন থাকলেও, এর কার্যকর বাস্তবায়নে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন: যথেষ্ট মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা, জনসচেতনতার অভাব, এবং কখনো কখনো আইন প্রয়োগে গাফিলতি। তবে, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন সংস্থা জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
উপসংহার:
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ আমাদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সফল বাস্তবায়নের জন্য সঠিক মনিটরিং, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইন প্রয়োগের কার্যকরী ব্যবস্থা প্রয়োজন। এভাবে আমরা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আমাদের জীবনের মান উন্নত করতে পারি।