21.5 C
Bangladesh
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
spot_img

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫: পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে শাস্তির বিধান

বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বেশ কয়েকটি আইন রয়েছে, যার মধ্যে শাস্তির বিধানও রয়েছে। এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন হলো **”বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫”**। এই আইনে পরিবেশ দূষণ ও ক্ষতি রোধ করার জন্য বিভিন্ন বিধান রয়েছে এবং আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিচে এই আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হলো:

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫

এই আইনটি পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয় এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে পরিবেশের ক্ষতিকারক কার্যকলাপকে সীমিত বা নিষিদ্ধ করার জন্য সুনির্দিষ্ট ধারা রয়েছে। আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো:

  1. পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করা।
  2. পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা।
  3. প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করা।
  4. টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা করা।

আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও শাস্তির বিধান

এই আইনের অধীনে বেশ কয়েকটি ধারা রয়েছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কাজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শাস্তি প্রদান করে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা এবং শাস্তির বিধান তুলে ধরা হলো:

১. পরিবেশ দূষণের শাস্তি (ধারা ৬)

আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পরিবেশ দূষণ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেমন:

জরিমানা**: প্রথমবার অপরাধ করলে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।

কারাদণ্ড**: যদি কেউ একই অপরাধ পুনরায় করে, তাহলে তাকে ২ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। সেই সাথে ২ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

২. ক্ষতিকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ধারা ৭)

এই ধারা অনুযায়ী, ক্ষতিকারক বর্জ্য নির্দিষ্ট নিয়মাবলীর বাইরে ফেলে দিলে শাস্তি প্রদান করা হবে। এর মধ্যে আছে:

জরিমানা**: ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা।

কারাদণ্ড**: ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সেই সাথে জরিমানা।

৩. পরিবেশগত ছাড়পত্র (ধারা ১২)

বাংলাদেশে যেকোনো নতুন শিল্প বা প্রকল্প স্থাপনের আগে **পরিবেশগত ছাড়পত্র** নিতে হয়। যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্র ছাড়া প্রকল্প শুরু করে, তাহলে তা আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর জন্য শাস্তি দেওয়া হবে।

জরিমানা: ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।

কারাদণ্ড: ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

৪. সেসপুল বা দূষণ সৃষ্টিকারী কার্যক্রম (ধারা ৫)

যদি কেউ দূষণ সৃষ্টিকারী কার্যক্রম পরিচালনা করে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং পরিবেশের জন্য বিপদজনক, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের কার্যক্রমের জন্য জরিমানা বা কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে:

জরিমানা: প্রথমবারে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

কারাদণ্ড: পুনরাবৃত্তি ঘটলে ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।

অতিরিক্ত জরিমানা ও শাস্তি

কোনো ব্যক্তি যদি এই আইনের অধীনে নিষিদ্ধ ঘোষিত কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে এবং এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়, তাহলে তাকে আইন অনুযায়ী আরও কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়াও, ক্ষতিপূরণ দাবির জন্য আদালতে মামলা করা যেতে পারে এবং ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে।

আইনের বাস্তবায়ন ও তদারকি

এই আইন বাস্তবায়নের জন্য একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলো **পরিবেশ অধিদপ্তর**। তারা পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কাজ করে এবং আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্ষমতা রয়েছে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে সতর্ক করা, জরিমানা আরোপ করা, এমনকি কারাদণ্ডের জন্য আদালতে অভিযোগ দায়ের করা।

উপসংহার

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫** একটি শক্তিশালী আইন, যা পরিবেশ দূষণ এবং ক্ষতিকর কার্যক্রম রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আইনের অধীনে শাস্তির বিধান কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ