25.4 C
Bangladesh
শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫
spot_img

এসি চালাচ্ছেন? ঘণ্টায় কত টাকা বিদ্যুৎ বিল আসছে জানেন তো?

গ্রীষ্মের তীব্র গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে এসি ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ বিল কতটা বাড়ছে, তা নিয়ে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। এই লেখায় আমরা এসি ব্যবহারের বিদ্যুৎ খরচ, বিলের পরিমাণ এবং পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এসি চালাচ্ছেন

এসি ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরচের হিসাব:

সাধারণত, বাসাবাড়িতে দেড় টনের এসি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। একটি আধুনিক ফাইভ-স্টার রেটিংযুক্ত দেড় টনের এসি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১.৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। যদি প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে এসি চালানো হয়, তাহলে দৈনিক বিদ্যুৎ খরচ হবে ১২ কিলোওয়াট-ঘণ্টা (কিলোওয়াট আওয়ার বা ইউনিট)।

বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ:

বাংলাদেশে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দাম ব্যবহারের পরিমাণ অনুযায়ী বিভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের দাম ৫.৭২ টাকা। তবে, উচ্চতর ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই হার বৃদ্ধি পায়। যদি মাসে ৩০ দিন ধরে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে এসি চালানো হয়, তাহলে মাসিক বিদ্যুৎ খরচ হবে ৩৬০ ইউনিট। এই পরিমাণ ব্যবহারের জন্য বিদ্যুতের হার অনুযায়ী মাসিক বিল প্রায় ২,১৬০ টাকা হতে পারে। এসি চালাচ্ছেন

অবশ্যই, এখানে আমি আরও বিস্তারিতভাবে পরিবেশের ওপর প্রভাব এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে করণীয় অংশ দুটি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করলামঃ

পরিবেশের ওপর প্রভাব

বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় একটি অংশ আসে কয়লা, গ্যাস ও ডিজেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। এসি ব্যবহারের ফলে যত বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তত বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে হয়। এর ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO₂), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx) ও সালফার অক্সাইড (SOx)-এর মতো ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ হয়, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসি চালাচ্ছেন

এসি ব্যবহারের কারণে বাড়তি বিদ্যুৎ চাহিদা তৈরি হয়। শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয়, সামগ্রিকভাবে যদি হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে অতিরিক্ত এসি চালায়, তখন দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়ে। ফলে লোডশেডিং বাড়ে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়ও বাড়ে।

এছাড়া, এসির মধ্যে ব্যবহৃত ফ্রিয়ন বা অন্যান্য কুল্যান্ট গ্যাসগুলো পরিবেশের জন্য আরও বড় হুমকি। যদি এসির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকভাবে না করা হয় কিংবা গ্যাস লিক হয়, তবে তা সরাসরি ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, এসি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা শুধু বিদ্যুৎ খরচ বাড়াই না, বরং জলবায়ু পরিবর্তন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং পরিবেশ দূষণের গোপন কারণও তৈরি করি।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে করণীয়

বিদ্যুৎ সাশ্রয় শুধু বিল কমানোর জন্য নয়, বরং পরিবেশ রক্ষার দিক থেকেও অত্যন্ত জরুরি। এসি ব্যবহারে কিছু সহজ পদক্ষেপ মেনে চললে বিদ্যুৎ খরচ অনেকটাই কমানো সম্ভব।

প্রথমত, ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি ব্যবহার করা সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এই এসিগুলো কম বিদ্যুৎ খরচ করে দীর্ঘ সময় ঘর ঠান্ডা রাখতে পারে। বিশেষ করে ফাইভ-স্টার বা থ্রি-স্টার রেটিংয়ের এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অনেক কার্যকর।

দ্বিতীয়ত, এসির তাপমাত্রা খুব কম না রেখে ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেট করুন। তাপমাত্রা যত বেশি থাকবে, বিদ্যুৎ খরচ তত কম হবে।

তৃতীয়ত, দরজা-জানালা ঠিকভাবে বন্ধ রাখতে হবে যাতে ঠান্ডা বাতাস বাইরে না যায়। সেই সাথে ঘরের পর্দা টেনে রাখা, জানালায় সানফিল্ম লাগানো বা ছাদে গার্ডেনিং করে ঘরকে প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করা যায়।

চতুর্থত, এসির ফিল্টার প্রতি দুই সপ্তাহ বা অন্তত মাসে একবার পরিষ্কার করা জরুরি। ময়লা ফিল্টার বিদ্যুৎ খরচ বাড়িয়ে দেয়।

পঞ্চমত, এসি বন্ধ করার পরও কিছু সময় ঘর ঠান্ডা থাকে। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় এসি চালানো উচিত নয়।

শেষ কথা:

সচেতন এসি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল কমানোর পাশাপাশি পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। আপনার এসি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের টিপস আমাদের সাথে শেয়ার করুন। এই তথ্যটি উপকারী মনে হলে, বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ