25.4 C
Bangladesh
শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫
spot_img

আপনার খাদ্য অভ্যাসই কি গরমে পানিশূন্যতার কারণ?

উফফ, কী গরম! গ্রীষ্মের এই তীব্র দাবদাহে নাজেহাল জনজীবন। তাপমাত্রা প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে একটা হলো পানির ঘাটতি বা পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)। ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি আর প্রয়োজনীয় লবণ (ইলেকট্রোলাইট) বেরিয়ে যায়, যার কারণে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি, অসুস্থ হয়ে যাই। বিশেষজ্ঞরা এই সময়ে বারবার হাইড্রেটেড থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন – মানে প্রচুর পানি আর পানীয় পান করতে বলছেন। গরমে পানিশূন্যতার কারণ

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাচ্ছি, তার মধ্যেই কিছু খাবার আমাদের শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে। গরমে পানিশূন্যতার কারণ

গ্রীষ্মকালে আমরা কেবল পানি পান করার দিকেই মনোযোগ দিই, কিন্তু কী খাচ্ছি সেটা হয়তো ভুলে যাই। এই খাবারগুলো গরমের সময় এড়িয়ে চলতে পারলে শরীরকে যেমন সুস্থ রাখা যায়, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে পরিবেশের ওপরও আমাদের খাদ্য অভ্যাসের প্রভাব কিছুটা কমানো সম্ভব।

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেই খাবারগুলো সম্পর্কে, যা এই গরমে আপনার শরীরে পানির ঘাটতি বাড়াতে পারে:

১. লবণাক্ত খাবার: যেন কোষ থেকে পানি শুষে নেয়!

ভাবুন তো, ফুচকা, চিপস, প্যাকেটের মুখরোচক স্ন্যাকস – গরমে খেতে দারুণ লাগে, তাই না? কিন্তু এই সব লবণাক্ত খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম। আর এই সোডিয়ামই হলো মূল ভিলেন। যখন আমরা বেশি লবণ খাই, তখন শরীর কোষে জমে থাকা পানি টেনে নেয় রক্তে লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য। এর ফলে কোষগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

শুধু তাই নয়, কিডনি এই অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য আরও বেশি কাজ করতে বাধ্য হয়, আর এই প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে আরও বেশি পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। তাই গরমে অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার মানেই ডিহাইড্রেশনের হাতছানি।

২. প্রক্রিয়াজাত মাংস: শুধু লবণ নয়, অন্য সমস্যাও আছে

সসেজ, সালামি, হ্যাম বা বিভিন্ন ধরনের ক্যানড মিট – এই প্রক্রিয়াজাত মাংসগুলো খেতে হয়তো সুস্বাদু, কিন্তু এগুলো তৈরি করার সময় উচ্চ পরিমাণে প্রিজারভেটিভ আর লবণ ব্যবহার করা হয়। এতে পানির পরিমাণ থাকে খুবই কম।

উচ্চ সোডিয়াম আর কম পানির এই কম্বিনেশন শরীরের ডিহাইড্রেশনকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তার ওপর, এই ধরনের মাংস হজম করতে শরীরের বেশি শক্তি লাগে এবং বিপাকের জন্য অতিরিক্ত পানি প্রয়োজন হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে যখন পানির সংকট বাড়ছে, তখন এমন খাবার যা শরীরের পানি খরচ বাড়ায়, তা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়াও, প্রক্রিয়াজাত মাংসের উৎপাদন প্রক্রিয়াও কিন্তু পরিবেশের ওপর বেশ বড়সড় চাপ সৃষ্টি করে।

৩. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: সতেজতার নামে ডিহাইড্রেশন?

অনেকেরই ধারণা, গরমে এক গ্লাস ঠান্ডা আইসড কফি বা কোনো এনার্জি ড্রিংক মুহূর্তেই শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। সাময়িকভাবে সতেজ লাগলেও, ভুলে গেলে চলবে না যে ক্যাফেইন একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক এর মানে হলো, এটি কিডনিকে বেশি বেশি প্রস্রাব তৈরি করতে উৎসাহিত করে।

বেশি প্রস্রাব মানেই শরীর থেকে বেশি পানি আর জরুরি লবণ বেরিয়ে যাওয়া। তাই অতিরিক্ত চা, কফি বা এনার্জি ড্রিংক পান করলে শরীর সহজেই ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে। গরমে তৃষ্ণা মেটাতে এগুলো পান করার আগে দু’বার ভাবুন।

৪. আচার: ছোট্ট বয়ামে লুকিয়ে থাকা লবণের বোমা

গ্রীষ্মকালে ডাল-ভাতের সঙ্গে বা অন্য যেকোনো খাবারের পাশে একটু আচার খেতে বেশ লাগে। কিন্তু আচারে লবণের পরিমাণ থাকে মারাত্মক বেশি। আচার সংরক্ষণের জন্যই প্রচুর লবণ ব্যবহার করা হয়।

যেমনটা লবণাক্ত খাবারের বেলায় বলেছি, আচারের এই উচ্চ লবণ শরীরের সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় এবং পানির চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। বেশি পরিমাণে আচার খেলে খুব সহজেই পানিশূন্যতার শিকার হতে পারেন।

৫. উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার (বিশেষ করে প্রাণিজ): হজম করতেও পানি লাগে

প্রোটিন আমাদের শরীরের গঠন আর মেরামতের জন্য অপরিহার্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অতিরিক্ত প্রোটিন, বিশেষ করে মাংস, ডিম বা দুধের মতো প্রাণিজ প্রোটিন হজম করার জন্য শরীরের অন্য যেকোনো ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টের (কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট) চেয়ে বেশি পানি প্রয়োজন হয়।

যখন আপনি অতিরিক্ত প্রোটিন খান, তখন শরীর এই প্রোটিনকে ভাঙার জন্য কিডনির ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়ায় কিডনিকে শরীর থেকে বর্জ্য বের করে দেওয়ার জন্য আরও বেশি পানি ব্যবহার করতে হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে এই বাড়তি চাহিদা মেটানো কঠিন হয়, যা পানিশূন্যতার কারণ হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে প্রাণিজ প্রোটিনের উৎপাদন এমনিতেই পরিবেশের ওপর একটি বোঝা, তার ওপর গরমে এটি শরীরের পানির চাহিদা বাড়ায়।

তাহলে এই গরমে কী করবেন?

এই গরমে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা। পাশাপাশি এমন খাবার বেছে নিন যা প্রাকৃতিকভাবেই পানি সমৃদ্ধ। যেমন:

  1. শসা, টমেটো
  2. তরমুজ, বাঙ্গি, ডাব
  3. লেবুর শরবত (সামান্য চিনি ও লবণ দিয়ে)
  4. টক দই বা ঘোল
  5. বিভিন্ন ধরনের তাজা ফলমূল ও সবজি

এই তাজা খাবারগুলো শুধু শরীরকে ঠান্ডা আর হাইড্রেটেডই রাখে না, এগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই প্রক্রিয়াজাত খাবার বা মাংসের চেয়ে পরিবেশবান্ধব। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা যখন বেড়েই চলেছে, তখন আমাদের খাদ্য অভ্যাস এমন হওয়া উচিত যা একদিকে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখবে, অন্যদিকে পরিবেশের ওপর চাপ কমাবে।

শেষ কথা:

গরমে শরীরে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, যা ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, হিট স্ট্রোকের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই সময়ে নিজেকে সুস্থ রাখাটা আরও জরুরি। তাই কেবল পানি পান করাই যথেষ্ট নয়, গরমে শরীরে পানিশূন্যতা বাড়ায় যেসব খাবার, সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সেগুলো এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।

আপনার খাদ্য তালিকার ছোট ছোট পরিবর্তন আপনাকে এই গরমে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। আর হ্যাঁ, যখন আপনি স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব খাবার বেছে নিচ্ছেন, তখন আসলে আপনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরও সুন্দর একটি পৃথিবীর দিকে এক পা এগিয়ে যাচ্ছেন।

গরমে সুস্থ থাকতে এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলার পাশাপাশি আর কী কী করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন? অথবা ডিহাইড্রেশন মোকাবিলায় আপনার কোনো বিশেষ টিপস আছে কি? কমেন্ট করে জানান আপনার মূল্যবান মতামত!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ