আজকের দিনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট। ঋতুচক্র বদলে যাচ্ছে, গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহের তীব্রতা বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। এই চরম আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের চারপাশের বন্যপ্রাণীরা, বিশেষ করে পাখিরা। তীব্র দাবদাহে অন্যান্য প্রাণীর মতো পাখিদেরও বেশ কষ্ট হয়। আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখি কিংবা দিকশূন্যভাবে ঘুরে বেড়ানো পাখিরা আশ্রয়ের জন্য তন্ন তন্ন করে এক টুকরো সবুজ খুঁজতে থাকে। তৃষ্ণায় শুকিয়ে যাওয়া গলা ভেজাতে চায়। ছোট্ট বারান্দা হতে পারে পাখির শেষ ভরসা
আপনি হয়তো ভাবছেন, আমি একা কী করতে পারি? আপনার ছোট্ট একটি উদ্যোগই পারে প্রকৃতির এই বন্ধুদের প্রাণ বাঁচাতে। দূর দূরান্ত থেকে এসে পাখি যেন খাবার পায়, পানি পান করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আপনার বারান্দা বা বাড়ির উঠোন হয়ে উঠতে পারে তাদের জন্য এক টুকরো নিরাপদ আশ্রয়। আপনি যদি পাখি পুষে থাকেন, তাহলে সেসব পোষা পাখিদেরও গরমের দিনগুলোতে বিশেষ যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ছোট্ট বারান্দা হতে পারে পাখির শেষ ভরসা
পাখির জন্য ভালোবাসা যেভাবে প্রকাশ করতে পারেন:
এই গরমে পাখিদের সাহায্য করার জন্য আপনি কয়েকটি সহজ কাজ করতে পারেন। আপনার ছোট্ট প্রচেষ্টা হতে পারে অনেক পাখির জীবন রক্ষা।
জলের ব্যবস্থা করুন:
এটি সবচেয়ে জরুরি। বন্য পাখিদের জন্য আপনার বারান্দার গ্রিলে বা কার্নিশে একটি ছোট, রঙিন পাত্রে পরিষ্কার জল রাখুন। রঙিন পাত্র পাখিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, ফলে তারা সহজেই জলের সন্ধান পায়। পোষা পাখি থাকলে তার খাঁচায় সর্বদা পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার জল আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। গরমকালে দিনে কয়েকবার জল পরিবর্তন করা ভালো। ছোট্ট বারান্দা হতে পারে পাখির শেষ ভরসা
খাবারের যোগান দিন:
অতিরিক্ত গরমে পাখিরা খাবারের খোঁজে বেশি দূর যেতে পারে না। খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বা মারাও যায়। তাই তাদের জন্য বারান্দায় বা খোলা জায়গায় ছোট পাত্রে ধান, চাল, বিভিন্ন রকম বীজ (যেমন বাজরা, সূর্যমুখী বীজ), ভাঙা যব, ভুট্টা, ছোট করে কাটা ফলের টুকরো (যেমন আপেল, পেঁপে) রেখে দিন। এই সহজলভ্য খাবারগুলো তাদের শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে।
আশ্রয়ের ব্যবস্থা করুন:
অনেক সময় বুলবুলিসহ বিভিন্ন পাখি কোনো সবুজ বারান্দা দেখলে আশ্রয় খোঁজে। দূর দূরান্ত থেকে খড়কুটো এনে নিজেরাই বাসা বানায়। আপনি যদি পাখি ভালোবাসেন, তাহলে বারান্দার একদিকের গ্রিলে বা কোণে ছোট একটি ঝুড়ি বা বাসা তৈরির সরঞ্জাম (যেমন ছোট ছোট শুকনো ডাল, খড়) রেখে দিতে পারেন। দেখবেন প্রিয় কোনো পাখি সেখানে আশ্রয় খুঁজছে বা বাসা বানাচ্ছে। এটি তাদের নিরাপদ আশ্রয় দেবে।
কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন:
অনেকে পোষা পাখিকে পাউরুটি, ভাজা বাদাম ইত্যাদি দেন। গরমে এ ধরনের খাবার হজমে সমস্যা করতে পারে, বিশেষ করে ছোট পাখিদের জন্য। তাই যতটা সম্ভব এগুলি এড়িয়ে চলুন। টাটকা ফল বা শস্যদানা অনেক বেশি উপকারী।
পোষা পাখির যত্ন নিন:
পোষা পাখিদের খাঁচা নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। গরমকালে এটি আরও বেশি জরুরি। অযথা পাখিকে বিরক্ত করবেন না বা ভয় দেখাবেন না। লেজ ধরে টানাটানি করার মতো কাজ থেকে বিরত থাকুন। পাখির স্বাস্থ্য বা আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এই ছোট ছোট কাজগুলো কেবল কয়েকটি পাখির জীবন বাঁচানো নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশের প্রতি আপনার দায়িত্ববোধের প্রকাশ। আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা এবং প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীল হওয়া এখন সময়ের দাবি। আপনার বারান্দা হতে পারে সেই ছোট শুরু, যা বৃহত্তর পরিবেশ রক্ষার অংশ।
মনে রাখবেন, প্রকৃতি তার সব উপাদান নিয়ে সুন্দর। পাখি সেই সৌন্দর্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের সাহায্য করা মানে নিজেদেরই সাহায্য করা, কারণ আমরা সবাই একই বাস্তুতন্ত্রের অংশ। তীব্র গরমে আপনার বারান্দায় রাখা এক ফোঁটা জল বা কয়েকটি শস্যদানা হয়তো একটি পাখির জীবন বাঁচিয়ে দেবে। আপনার এই সহানুভূতি প্রকৃতির জন্য অমূল্য।
আসুন, আমরা সবাই মিলে এই গরমে পাখিদের পাশে দাঁড়াই। আপনার বারান্দায় আজই একটু জল আর খাবার রাখুন। এই বার্তাটি আপনার বন্ধু এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন, যাতে তারাও এগিয়ে আসে। আপনি কি পাখিদের জন্য কিছু করেছেন? নিচে মন্তব্য করে জানান আপনার অভিজ্ঞতা।