বাইরে ঝুম বৃষ্টি, কিন্তু ঘরের ভেতর দরদর করে ঘামছেন। ফ্যান চালালেও গায়ে যেন গরম বাতাস লাগছে। এই অস্বস্তিকর, চটচটে অনুভূতিটা কি আপনার খুব পরিচিত? বর্ষাকালের এই ভ্যাপসা গরম আমাদের অনেকেরই জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। এই অসহনীয় অবস্থা থেকে বাঁচতে আমরা রিমোট হাতে নিয়ে এসি অন করি এবং তাপমাত্রা কমিয়ে দেই ১৬ বা ১৮ ডিগ্রিতে। কিন্তু তাতেও যেন স্বস্তি মেলে না, উল্টো মাস শেষে বিশাল অংকের বিদ্যুৎ বিল দেখে মাথায় হাত পড়ে। বর্ষায় বিল অর্ধেক
কিন্তু যদি বলি, আপনার এসির রিমোটেই এমন একটি ‘গোপন’ বোতাম আছে যা এই বর্ষায় আপনাকে দেবে আরামদায়ক ঘুম, আর বিদ্যুৎ বিলও বাঁচাবে প্রায় অর্ধেক? অবাক হচ্ছেন? চলুন, আজ এসির সেই জাদুকরী মোডটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যা আপনার স্বস্তির পাশাপাশি আমাদের পরিবেশ রক্ষায়ও একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বর্ষায় বিল অর্ধেক
আসল শত্রু গরম নয়, আর্দ্রতা!
বর্ষাকালে আমাদের অস্বস্তির মূল কারণ কিন্তু শুধু তাপমাত্রা নয়, বরং বাতাসে থাকা অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতা (Humidity)। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকলে আমাদের শরীরের ঘাম সহজে শুকায় না। ফলে শরীর ঠান্ডা হতে পারে না এবং আমরা একটা অসহ্যকর চটচটে ভাব অনুভব করি। বর্ষায় বিল অর্ধেক
এই অবস্থায় আমরা যখন এসির ‘Cool’ মোডে তাপমাত্রা অনেক কমিয়ে দেই, তখন কম্প্রেসারকে দ্বিগুণ শক্তি দিয়ে ঘর ঠান্ডা করতে হয়। এতে বিদ্যুৎ খরচ হয় 엄청, কিন্তু বাতাসের আর্দ্রতা তেমন একটা কমে না। ফলে ঘর ঠান্ডা হলেও সেই ভ্যাপসা ভাবটা পুরোপুরি যায় না।
আপনার এসির ‘সুপারহিরো’: ড্রাই মোড (Dry Mode)
এই সমস্যার সমাধান হলো আপনার এসির ‘ড্রাই মোড’। রিমোটে সাধারণত একটি জলের ফোঁটার (Water Drop) চিহ্ন দিয়ে এই মোডটি বোঝানো থাকে। এই মোডটি বিশেষভাবে বর্ষা বা আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
‘ড্রাই মোড’ কীভাবে কাজ করে?
‘ড্রাই মোড’ মূলত একটি ডি-হিউমিডিফায়ার হিসেবে কাজ করে। এর মূল উদ্দেশ্য ঘরকে বরফের মতো ঠান্ডা করা নয়, বরং বাতাস থেকে অতিরিক্ত আর্দ্রতা শুষে নেওয়া।
- যখন আপনি এই মোডটি চালু করেন, তখন এসির ফ্যান ধীর গতিতে চলে এবং কম্প্রেসারটি অল্প সময়ের জন্য চালু হয়ে আবার বন্ধ হয়ে যায়।
- এই প্রক্রিয়ায় এটি বাতাস থেকে জলীয় বাষ্পকে ঘনীভূত করে পানি হিসেবে বের করে দেয়।
- বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় আপনার শরীর থেকে ঘাম দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং আপনি ২৫-২৬ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও অত্যন্ত আরামদায়ক এবং ঝরঝরে অনুভব করেন।
কেন এটি আপনার পকেট ও পরিবেশের বন্ধু?
১. বিদ্যুৎ সাশ্রয়: যেহেতু ‘ড্রাই মোডে’ কম্প্রেসারকে একটানা চলতে হয় না, তাই এটি ‘কুল মোড’-এর তুলনায় ৩০% থেকে ৫০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে। আপনার পকেটের ওপর চাপ কমে, বিল আসে অর্ধেক!
২. পরিবেশ রক্ষা: কম বিদ্যুৎ খরচ করার অর্থ হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে কম চাপ পড়া। আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনও জীবাশ্ম জ্বালানি (fossil fuel) পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যা কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে। সুতরাং, আপনি যত কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তত কম কার্বন নিঃসরণ হবে। আপনার রিমোটের একটি বোতামের এই ছোট পরিবর্তন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি বড় সম্মিলিত পদক্ষেপ হতে পারে।
৩. এসির দীর্ঘ জীবন: কম্প্রেসারের ওপর কম চাপ পড়ায় আপনার শখের এসিটিও দীর্ঘদিন ভালো থাকবে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কমে আসবে।
শেষ কথা
সুতরাং, পরেরবার যখন বর্ষার ভ্যাপসা গরমে কষ্ট পাবেন, তখন তাপমাত্রা কমিয়ে দেওয়ার বদলে এসির ‘ড্রাই মোড’ অন করে দেখুন। আপনি শুধু আরামই পাবেন না, মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল দেখেও আপনার মুখে হাসি ফুটবে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই ছোট একটি অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি আমাদের এই গ্রহ এবং পরিবেশ রক্ষায়ও একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা পালন করতে পারবেন। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন-এর বিরুদ্ধে লড়াইটা কোনো বড় সেমিনার বা সম্মেলনে সীমাবদ্ধ নয়; এর শুরুটা হয় আমাদের নিজেদের ঘর থেকেই, আমাদের দৈনন্দিন ছোট ছোট সচেতন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।
আপনার মতামত কী?
আপনি কি আগে এসির ‘ড্রাই মোড’ ব্যবহার করেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? বিদ্যুৎ বিল বাঁচাতে বা পরিবেশ রক্ষায় আপনার আর কোনো টিপস থাকলে আমাদের সাথে কমেন্ট বক্সে শেয়ার করুন। এমন আরও দরকারি তথ্য পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
অবশ্যই! আপনার ব্লগ পোস্টের জন্য ১০টি আকর্ষণীয় শিরোনাম, একটি মেটা ডেসক্রিপশন, একটি ফেসবুক পোস্ট এবং একটি ৩০-সেকেন্ডের ভয়েস স্ক্রিপ্ট নিচে দেওয়া হলো।