28 C
Bangladesh
শুক্রবার, জুলাই ১১, ২০২৫
spot_img

বদলে যাওয়া বর্ষায় শিশুর যত্ন

বর্ষা মানেই যেন একরাশ স্মৃতি আর ভালো লাগা। আকাশ কালো করে আসা মেঘ, ঝমঝম শব্দে বৃষ্টি, আর তার সাথে এক কাপ গরম চা—এই ছবিটা আমাদের সবার মনেই প্রশান্তি এনে দেয়। ছুটির দিনে ইলিশ-খিচুড়ির আয়োজন তো বর্ষার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এই রোমান্টিকতার বাইরেও বর্ষার একটি কঠিন বাস্তবতা আছে, বিশেষ করে যখন আপনার বাড়িতে একজন দুরন্ত শিশু থাকে। বদলে যাওয়া বর্ষায় শিশুর যত্ন

শিশুর জগৎ তার নিজের আনন্দে ভরপুর। শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা—ঋতু বদল তার দুরন্তপনাকে দমাতে পারে না। যখন আপনি জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখছেন, আপনার শিশুটির মন তখন হয়তো ছাদে বা উঠোনে গিয়ে বৃষ্টির পানিতে ভেজার জন্য ছটফট করছে। এখানেই বাবা-মা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব শুরু হয়। কারণ বর্ষার সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। তবে আজকের দিনে এই ঝুঁকিগুলো আর কেবল সাধারণ বর্ষাকালীন রোগবালাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন-এর মতো ভয়াবহ বাস্তবতা। বদলে যাওয়া বর্ষায় শিশুর যত্ন

জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে বর্ষায় শিশুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে?

আগে বর্ষা আসতো একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন-এর কারণে এখন ঋতুচক্র অনেকটাই অনিয়মিত। আমরা এখন দেখছি হঠাৎ شدید বৃষ্টিপাত, অল্প সময়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, আবার কখনও লম্বা সময় ধরে বৃষ্টির দেখা না পাওয়া। এই চরমভাবাপন্ন আবহাওয়াই মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, কলেরা ও টাইফয়েডের প্রকোপ বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের শিশুদের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতিতেও আনতে হবে কিছু কৌশলগত পরিবর্তন।

কেমন হবে শিশুর পোশাক?

সব ঋতুতেই শিশুর জন্য আরামদায়ক পোশাকই সেরা। এমন পোশাক নির্বাচন করুন যা দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি শিশুর জন্য স্বস্তিদায়ক। বর্ষাকালে কাপড় সহজে শুকোতে চায় না, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় স্যাঁতস্যাঁতে ভাবটাও বেড়ে যায়। বদলে যাওয়া বর্ষায় শিশুর যত্ন

করণীয়:

  1. শিশুকে সুতির হালকা বা সিনথেটিক কাপড়ের পোশাক পরান যা সহজে শুকিয়ে যায় এবং বাতাস চলাচল করতে পারে। এটি ছত্রাকজনিত ত্বকের সংক্রমণ থেকে তাকে রক্ষা করবে।
  2. বৃষ্টির দিনে তাপমাত্রা কিছুটা কমলে শিশুকে আবহাওয়া অনুযায়ী ফুলহাতা বা সামান্য মোটা পোশাক পরান।
  3. স্কুলে বা বাইরে যাওয়ার সময় রেইনকোট এবং গামবুট ব্যবহার আবশ্যক। এতে হুট করে বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লাগার ভয় থাকবে না।
  4. বাইরে গেলে ব্যাগে সবসময় একটি শুকনো তোয়ালে এবং এক সেট বাড়তি পোশাক রাখুন।

পরিবেশগত সংযোগ:জলবায়ু পরিবর্তন-এর কারণে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ছে এবং বর্ষার সময়কাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তাই সহজে শুকায় এমন পোশাক এখন আর কেবল বিলাসিতা নয়, এটি স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের বিরুদ্ধে একটি জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

শিশুর খাবার কেমন হবে?

বর্ষায় পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। বাইরের ভাজাপোড়া, কাটা ফল বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি যেকোনো খাবারই শিশু এবং বড় উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক।

করণীয়:

  1. এই সময় বাইরের খাবার पूरी तरह बंद করুন। রাস্তার পাশের শরবত বা ফলের রস এড়িয়ে চলুন, কারণ এসব তৈরিতে ব্যবহৃত জল কতটা নিরাপদ, তা আমরা জানি না।
  2. বাড়িতে টাটকা রান্না করা সুষম খাবার খাওয়ান। শিশুকে মৌসুমি ফল ও সবজি খেতে উৎসাহিত করুন।
  3. খাবারের আগে ও পরে শিশুর হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
  4. পরিবারের সবাই একসাথে বসে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি শিশুর মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
  5. শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ জল পান করান। প্রয়োজনে জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ব্যবহার করুন।

পরিবেশগত সংযোগ: অনিয়মিত এবং شدید বৃষ্টিপাতের কারণে আমাদের পানীয় জলের উৎসগুলো প্রায়ই দূষিত হয়ে পড়ে। ভূগর্ভস্থ জলের স্তর এবং সরবরাহ লাইনে দূষিত জল মিশে যাওয়ার ঝুঁকি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাই, শিশুর খাবার ও জলের সুরক্ষায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা আসলে পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া।

ত্বক ও চুলের বিশেষ যত্ন

বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় ত্বক ও চুলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। ঘামাচি, র‍্যাশ, অ্যালার্জি এবং চুলে খুশকির সমস্যা এই সময় বেড়ে যায়।

করণীয়:

  1. শিশুকে প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। তবে রোজ শ্যাম্পু করানোর প্রয়োজন নেই, সপ্তাহে দুই দিনই যথেষ্ট।
  2. শিশুর ত্বকের জন্য উপযোগী সাবান ও লোশন ব্যবহার করুন, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
  3. ভিজে গেলে যত দ্রুত সম্ভব শরীর ও মাথা ভালোভাবে মুছে দিন। চুল বেশিক্ষণ ভেজা রাখবেন না।
  4. নিয়মিত শিশুর নখ কেটে দিন, কারণ নখের ভেতর ময়লা জমে সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

পরিবেশগত সংযোগ: বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা এবং উষ্ণতা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। জলবায়ু পরিবর্তন-এর ফলে এই আর্দ্র ও উষ্ণ সময়কাল দীর্ঘায়িত হওয়ায় শিশুদের ত্বকের সমস্যা মোকাবিলার জন্য আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হচ্ছে।

শেষ কথা

শিশুর যত্ন মানে শুধু তাকে খাওয়ানো বা পোশাক পরানো নয়। এর অর্থ হলো তার চারপাশের জগতের পরিবর্তনগুলো বোঝা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। বর্ষায় শিশুর যত্ন এখন আর কেবল একটি পারিবারিক বিষয় নয়; এটি আমাদের পরিবর্তিত পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন-এর বিরুদ্ধে একটি ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ লড়াই।

আজ আমরা আমাদের শিশুদের যে ছোট ছোট পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখছি, তা আসলে এক বৃহত্তর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। আমাদের বুঝতে হবে যে, শিশুর तात्कालिक সুস্থতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ দেওয়ার জন্য আমাদের এই গ্রহের যত্ন নিতে হবে।

আপনার ভাবনা কী?

জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করছে, তা নিয়ে কি আপনি চিন্তিত? আপনার সন্তানের সুরক্ষায় আপনি নতুন কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান। এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং পরিবেশগত সচেতনতা বাড়াতে আমাদের সাথে যোগ দিন। আরও জানতে আমাদের নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ