29.6 C
Bangladesh
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
spot_img

চলনবিলে মাছের আকাল: জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা নাকি অন্য কোনো সংকট?

চলনবিলে মাছের আকাল: জলবায়ু সংকটের কারণে মাছের মজুদ কমছে?

আজ শনিবার নাটোরের সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ভোরে শুরু হয়েছিল জমজমাট মাছ ধরার আসর। প্রায় দেড় হাজার মানুষ গাইবান্ধা থেকে এসে বিলের প্রান্তে ভিড় করেন। তারা চাল-পলো, ঠেলাজাল, বাদাইজালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে বিলজুড়ে মাছ ধরতে নেমেছিলেন। যদিও তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টার পর তারা পেয়েছেন মাত্র তিনটি বোয়াল মাছ। চলনবিলে মাছের আকাল

বিলে মাছের এমন ঘাটতির কারণ নিয়ে বেশ উদ্বেগ রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। চলনবিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মনে করেন, চায়না জাল ও সেতি জাল ব্যবহারের কারণে বিলের মাছের মজুদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ভাষায়, “আজকের পরিস্থিতি আবার প্রমাণ করল যে, চলনবিলে মাছের উৎপাদন অনেক কমে গেছে।”

কেন কমছে চলনবিলের মাছের উৎপাদন?

স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত মাছ ধরা, ও দূষণ মিলিতভাবে বিলের জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে, অতিরিক্ত মাছ ধরার পদ্ধতি, যেমন চায়না জাল ব্যবহার, এবং খরা মৌসুমে পানির ঘাটতি মাছের বংশবৃদ্ধি কমিয়ে দিয়েছে।

সিংড়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, “বিলে এই সময়ে পানি বেশি থাকায় মাছগুলো সহজেই ধরা যায়নি। তবে অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং জলবায়ু পরিবর্তনও একটি বড় কারণ।”

চলনবিলে মাছের আকালমাছ ধরার অভিজ্ঞতা: উৎসাহিত হলেও হতাশাগ্রস্ত

মাছ ধরতে আসা মানুষজনের অনেকেই শখের মাছ শিকারি, যাদের প্রধান উদ্দেশ্য শুধু মাছ ধরা নয়; বরং দলবেঁধে গ্রামাঞ্চলে আনন্দঘন একটি দিন কাটানো। মাছ ধরার জন্য মাথাপিছু প্রায় ১,৭০০ টাকা খরচ করেও শিকারিরা আশানুরূপ ফল পাননি। গাইবান্ধার বাসিন্দা শাহাদৎ হোসেনের মতো অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরেছেন। তিনি বলেন, “২০ বছর ধরে বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ ধরছি, কিন্তু এবার চলনবিলের অভিজ্ঞতা ছিল হতাশাজনক।”

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থানীয় পরিবেশগত সমস্যাগুলোর কারণে চলনবিলের মাছের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। চলনবিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মনে করেন, এমন পরিবেশ অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটে পড়বে স্থানীয় মৎস্য সম্পদ।

পরিবেশ সচেতনতা ও ভবিষ্যৎ উদ্যোগ

চলনবিলে মাছের আকাল শুধু মৎস্য শিকারিদের জন্য নয়, বরং সমগ্র জলবায়ু ও পরিবেশ ব্যবস্থার জন্যই একটি বড় সংকেত। একে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা ও পরিকল্পিত উদ্যোগ। স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনভাবে মাছ ধরা এবং স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মকানুন মেনে চললে বিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

জলবায়ু সংকট ও পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগে আপনিও অংশ নিন। চলনবিলের মতো এলাকাগুলোর সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়ান, এবং আরো তথ্য পেতে আমাদের পেজটি অনুসরণ করুন ও মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ