মেরিন ড্রাইভ সড়কে খাল দখল ও উচ্ছেদ: রাতের অভিযানের নেপথ্য ঘটনা
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর এলাকায় একটি প্রাকৃতিক খাল দখল করে রেস্তোরাঁ নির্মাণের চেষ্টার ঘটনা আমাদের পরিবেশ রক্ষার তাগিদকে আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। গভীর রাতে কিছু লোক গোপনে ৮১টি কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে এবং বালুভর্তি জিও টিউব দিয়ে বাঁধ দিয়ে খালটির অর্ধেক দখল করে ফেলে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় প্রশাসনের দ্রুত অভিযানে খালটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
এই ঘটনা শুধু একটি খাল দখলের নয়, এটি প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
রাতের আঁধারে খাল দখল: কী ঘটেছিল?
দরিয়ানগর সৈকত সংলগ্ন খালটি পাহাড়ি ঢলের পানি বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত করার একটি প্রাকৃতিক পথ। এলাকাবাসীর মতে, রাতে ২০-২৫ জন শ্রমিক ট্রাকভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে আসে এবং তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু করে। বালুভর্তি জিও টিউব এবং কংক্রিটের খুঁটির মাধ্যমে খালটির অর্ধেক অংশ দখল করে ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা দ্রুত প্রশাসনকে খবর দিলে পরদিন বিকেলে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, খালটির ১২০ ফুট প্রস্থের মধ্যে প্রায় ৭০-৮০ ফুট ইতোমধ্যে দখল করা হয়েছিল, যার ফলে পানি প্রবাহ সীমিত হয়ে যায়। পাহাড়ি ঢল নামার সময় এই অবরোধ বড় ধরনের বন্যা ও ভূমিধসের কারণ হতে পারত।
প্রাকৃতিক ভারসাম্যে খালগুলোর ভূমিকা
খাল দখলের ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিয়ানগর এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। খালটি শুধু পানি নিষ্কাশনের পথ নয়; এটি স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের একটি অংশ। খালের আশেপাশে থাকা বাস্তুসংস্থান, যার মধ্যে গাছপালা, মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জীব রয়েছে, এর ওপর নির্ভরশীল।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ধরনের প্রাকৃতিক পথগুলোর গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। ভারী বর্ষণ এবং অনিয়মিত আবহাওয়ার কারণে পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ বাড়ছে। এই খালগুলো পানি প্রবাহিত করে বিপর্যয় রোধ করে। কিন্তু দখলদারদের কার্যক্রম এই প্রাকৃতিক প্রতিরোধব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে।
প্রশাসনের উদ্যোগ: সময়োচিত পদক্ষেপ
স্থানীয় প্রশাসন এই খাল দখলের ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। অভিযানে ৮১টি কংক্রিটের খুঁটি এবং জিও টিউব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, দখলদারদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইন অনুযায়ী মামলা করা হবে।
তবে এই উদ্যোগ একটি বড় প্রশ্ন তুলেছে: দখলদাররা কীভাবে এমন স্পর্শকাতর একটি এলাকায় রাতের আঁধারে এই ধরনের কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হলো? স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির ঘাটতিও এখানে স্পষ্ট।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: দখলদারির বিপদ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাহাড়ি ঢল এবং বন্যার প্রকোপ বেড়েছে। দরিয়ানগরের খালগুলো শুধুমাত্র স্থানীয় এলাকার জন্য নয়, বরং মেরিন ড্রাইভ সড়কের জন্যও একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।
যদি দখলদাররা সফল হতো, তাহলে স্থানীয় গ্রামগুলোর ৭,০০০ এর বেশি মানুষের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়ত। আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোও এর প্রভাব থেকে রেহাই পেত না।
উপসংহার: পরিবেশ রক্ষায় সবার অংশগ্রহণ জরুরি
এই ঘটনা আমাদের আরও সচেতন হতে শেখায়। পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব শুধু প্রশাসনের নয়, এটি আমাদের সকলের। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সক্রিয়ভাবে কাজ করা এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া সময়ের দাবি।
প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের প্রতিটি ঘটনা আমাদের দীর্ঘমেয়াদে আরও দুর্বল করে তোলে। আসুন, পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে সবাই অংশ নিই এবং এই চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই।