জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই রূপান্তর সহজ নয়। উন্নত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশ এই লক্ষ্য অর্জনে হোঁচট খাবে।
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৯)-এর একটি সাইড ইভেন্টে “রোড টু নেট জিরো: নেভিগেটিং দ্য এনার্জি ট্রানজিশন ইন সাউথ এশিয়া” শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সম্ভাবনা, প্রতিবন্ধকতা এবং সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৪০% নবায়নযোগ্য উৎস থেকে সরবরাহ করার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, এই লক্ষ্য অর্জন সহজ নয়।
প্রযুক্তিগত ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ
তিনি উল্লেখ করেন যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রযুক্তি স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণে উন্নতমানের প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন। সোলার প্যানেল আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চীনকে বাংলাদেশে সোলার ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
নীতিগত সমাধানের প্রয়োজন
বাংলাদেশে সোলার প্যানেলের ওপর কর হ্রাস এবং সংশ্লিষ্ট নীতিমালা পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে, আরও কার্যকর নীতি সহায়তা ছাড়া এই খাতের বিস্তার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য এই রূপান্তর কেবল কার্বন নিঃসরণ কমানোর একটি উপায় নয়; এটি দারিদ্র্য হ্রাস এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগও তৈরি করতে পারে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান “থ্রি জিরোস” ভিশনের কথা উল্লেখ করেন:
- জিরো কার্বন নিঃসরণ
- জিরো দারিদ্র্য
- জিরো কর্মহীনতা
তবে, এই ভিশন বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
বাংলাদেশের আর্থিক চাহিদা
নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এর মধ্যে ৩২ বিলিয়ন ডলার দেশের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যবস্থাপনা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাকি অংশ আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে অর্জনের আশা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি আয়োজনে “আর্টিকেল ৬ ইমপ্লিমেন্টেশন পার্টনারশিপ” সেশনে অংশ নেন। সেখানে তিনি জাপানের কাছে প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, জার্মানির সঙ্গে সহযোগিতায় বাংলাদেশের নদীগুলো পরিষ্কার করার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছেন। প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
উপসংহার
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর বাংলাদেশের জন্য একটি জরুরি ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। তবে, এই রূপান্তরের পথে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্য কেবল নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা তুলে ধরেনি, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকারও প্রকাশ করেছে। এটি স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশ এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না।
Call-to-Action
আপনার এলাকায় পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ নিন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ান। আরও তথ্য পেতে আমাদের সাইটে সাবস্ক্রাইব করুন এবং পরিবেশগত বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট পান।