29.4 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, জুন ৫, ২০২৫
spot_img

তিস্তা নদীর ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম: জলবায়ু পরিবর্তনের অদৃশ্য বিপদ

তিস্তার ক্রমাগত ভাঙন: গ্রামের পর গ্রাম বিলীন

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর ভাঙনে চারটি গ্রামের মানুষ অসহায়। এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ১০০ বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের দত্তের খামার, দক্ষিণ শ্রীপুর, ফুলমিয়ার বাজার এবং পুটিমারি গ্রামে এই ভাঙনের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। দিন যতই গড়াচ্ছে, নদীর গ্রাস যেন আরও নির্মম হয়ে উঠছে। তিস্তা নদীর ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম

স্থানীয়দের জীবনে প্রতিদিন বাড়ছে দুশ্চিন্তা। কেউ জমির আধা পাকা ধান কেটে ফেলার চেষ্টা করছেন, কেউ বা গাছপালা সরিয়ে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের সামনে তাদের এই উদ্যোগগুলো যেন অনেকটাই অপ্রতুল।

হারিয়ে যাওয়া জীবনের গল্প

একজন কৃষকের চার বিঘা জমি, যার মধ্যে তিন বিঘায় আমন ধানের ফসল ছিল, কয়েক দিনের ব্যবধানে তিস্তায় তলিয়ে গেছে। ধান পাকার আগেই তাকে ফসল কেটে নিতে হয়েছে, কিন্তু তা থেকেও তেমন লাভ হয়নি। একই গ্রামের আরেকজন জানান, তাঁর একমাত্র বসতভিটা এখন নদীর খুব কাছাকাছি। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে তিনি ভাবেন, সকালে উঠে হয়তো বাড়িটাকেও নদীর গর্ভে দেখতে হবে।

গ্রামের মানুষের অভিযোগ, তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। বরং প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ ফুট এলাকা তিস্তা গ্রাস করছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

তিস্তা নদীর ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম

তিস্তা নদীর ভাঙন: জলবায়ু পরিবর্তনের নির্মম প্রভাব

তিস্তা নদীর ভাঙন শুধু প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি প্রবাহ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নদীর তীরগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে নদীর আশপাশের জমি এবং বসতভিটা হারানোর ঘটনা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন শুধু তিস্তাকে নয়, পুরো উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর গতিপথ ও প্রকৃতি বদলে দিচ্ছে। এর ফলে জীবিকা হারাচ্ছেন কৃষক ও স্থানীয় মানুষ। তিস্তা নদীর ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম

সমাধান: দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিস্তার ডান ও বাঁ তীর সংরক্ষণে ৩১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে আরও অনেক সময় লাগবে। এর মধ্যেই গ্রামের মানুষ আরও ক্ষতি মুখে পড়বেন।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য আপৎকালীন সহায়তা যেমন জরুরি, তেমনি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনাও প্রয়োজন। নদী তীর রক্ষা বাঁধ, পলি অপসারণ, এবং নদীর গতিপথ পুনর্বিন্যাসের মতো প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য বিকল্প জীবিকার উৎস তৈরি করতে হবে।

মানবিক সমাধান: আমাদের করণীয়

তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার মানুষদের কেবল আর্থিক সহায়তা দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাদের জীবনযাত্রা পুনর্গঠনে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ ও নদী রক্ষার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

একটি কথা মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবাইকে একদিন না একদিন স্পর্শ করবে। তাই এখনই সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।

Call to Action:

আপনার এলাকায় নদীভাঙনের মতো সমস্যা হলে কীভাবে আপনি সমাধানের উদ্যোগ নেবেন? নিচে মন্তব্য করুন এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য আপনার পরামর্শ দিন। আমরা সবাই মিলে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে পারি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ