ঢাকায় প্রাণ–প্রকৃতি ও জলবায়ু পরিবর্তন: এক নদীকেন্দ্রিক নগরের বিবর্তন
ঢাকা শহর একসময় নদীকেন্দ্রিক নগর ছিল। নদী ও জলাভূমি শহরের স্বাভাবিক গতিপথকে নির্দেশ করত। প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে গ্রাম, গঞ্জ, ও প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, বিশেষ করে ১৯৮৮ সালের বন্যার পর, শহর রক্ষা বাঁধের নামে নদী থেকে শহরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এতে নগরবাসী প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যায়, যা ঢাকার সামগ্রিক বাস্তুসংস্থানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার সম্প্রতি ‘জাস্ট আরবান’ শীর্ষক সম্মেলনে এ বিষয়ে বলেন, ঢাকার নগরায়ণ প্রকৃতিবান্ধব নয়। তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকাকে একটি সস্তা শ্রমের উৎস হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে ইটের দালান নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস করা হয়েছে। ঢাকা শহরে প্রাণ–প্রকৃতি
ঢাকার নগরায়ণের সমস্যাগুলো
ঢাকার নগরায়ণে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইসরাত ইসলাম বলেন, শহর হওয়ার কথা ছিল অনুর্বর জমিতে। কিন্তু ঢাকা পূর্ব–পশ্চিমে বিস্তৃত হয়েছে, যা মূলত জলাভূমি ও ধানখেত ছিল। এসব অঞ্চলে আবাসন প্রকল্প তৈরি করে স্থানীয়দের উচ্ছেদ করা হয়েছে। গবেষণা বলছে, এসব প্রকল্পে ৬৪ শতাংশ স্থানীয় মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। শহরের অধিকাংশ মানুষ ২০০ বর্গফুটের কম জায়গায় বসবাস করছে। ঢাকা শহরে প্রাণ–প্রকৃতি
ঢাকা শহর ও নাগরিক বিচ্ছিন্নতা
ঢাকায় কাজের প্রয়োজনে আসা অনেক মানুষ এ শহরকে আপন মনে করে না। গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, গ্রামের ফেলে আসা পরিবেশ ঢাকায় খুঁজে পাওয়া যায় না। এই দূরত্ব নগরবাসীকে ঢাকার প্রকৃত বাস্তুসংস্থানের সঙ্গে আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলছে।
নদী ও জলাভূমি দখলের বিরুদ্ধে লড়াই
রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ঢাকার নদী ও খালগুলো দখল করে আবাসন প্রকল্প ও শিল্পকারখানা তৈরি হচ্ছে। দখলকারীরা সীমানাপ্রাচীর দিয়ে জলাভূমি স্থায়ীভাবে নিজেদের করে নিচ্ছে। এসব কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমন্বিতভাবে লড়াই করতে হবে। ঢাকা শহরে প্রাণ–প্রকৃতি
ঢাকার ভবিষ্যৎ: প্রকৃতিবান্ধব নগরায়ণ
ঢাকার টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রকৃতিবান্ধব নগরায়ণ অপরিহার্য। পরিবেশ রক্ষা, সুষ্ঠু আবাসন ব্যবস্থা, এবং নাগরিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ঢাকা শহরকে একটি বাসযোগ্য নগরে রূপান্তর করা সম্ভব।
Call to Action: আপনার মতামত জানাতে নিচের মন্তব্য বাক্সে লিখুন। পরিবেশবান্ধব নগরায়ণের প্রচেষ্টায় সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন!