ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্বিগুণ : মশা বাহিত মহামারীর জন্য কি বিশ্ব প্রস্তুত?
ভূমিকা
বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশের ক্ষতি করছে না, বরং তা মানবস্বাস্থ্যের জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ডেঙ্গুর মতো ভাইরাল সংক্রমণ এখন আগের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। একটি নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, এশিয়া ও আমেরিকার অন্তত ২৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এমন জায়গায় বসবাস করছে যেখানে জলবায়ু উষ্ণায়নের কারণে আগামী ২৫ বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্বিগুণ হতে পারে। এটি একটি সতর্ক সংকেত, যা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডেঙ্গুর বৃদ্ধি
গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ডেঙ্গুর ১৯ শতাংশ ঘটনা ঘটছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে। আইপিসিসি (Intergovernmental Panel on Climate Change) অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ ৬১ শতাংশ বাড়তে পারে, এবং কিছু শীতপ্রধান অঞ্চলে এটি দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যেখানে মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এশিয়া ও আমেরিকার ২১টি দেশের ডেঙ্গু প্রকোপ এবং জলবায়ুর ওঠানামার মধ্যে স্পষ্ট সম্পর্ক পাওয়া গেছে, যা এই রোগের বিস্তারকে আরও ত্বরান্বিত করছে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ঝুঁকি
ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাল রোগ, যা সাধারণত ‘এএইডিস ইজিপ্টি’ এবং ‘এএইডিস অ্যালবোপিকটাস’ মশার মাধ্যমে ছড়ায়। মৃদু ডেঙ্গু উপসর্গহীন হতে পারে, তবে জ্বর, ফ্লু, রক্তপাত ও নিম্ন রক্তচাপের মতো গুরুতর লক্ষণও দেখা দিতে পারে, যা মাঝে মাঝে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে উপসর্গগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জলবায়ু পরিবর্তন শুধু রোগের বিস্তারকেই ত্বরান্বিত করছে, বরং এর সাথে সাথে এর প্রভাব আরও খারাপ হতে পারে, বিশেষ করে উষ্ণ অঞ্চলে।
ডেঙ্গু ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক
জলবায়ু পরিবর্তন ডেঙ্গু সংক্রমণের হারকে প্রভাবিত করতে পারে এমন অন্যান্য কারণও রয়েছে, যেমন বৃষ্টিপাতের ধরন, ঋতু পরিবর্তন, ভাইরাসের ধরন, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব। গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে, তাপমাত্রার উত্থান ডেঙ্গু ভাইরাসের বিস্তারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। মশারা সাধারণত ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাস তৈরি করতে সক্ষম, যা ভবিষ্যতে বিশেষভাবে পেরু, মেক্সিকো, বলিভিয়া এবং ব্রাজিলের কিছু অংশের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে উঠবে।
আগাম সতর্কতা: প্রভাব এবং পদক্ষেপ
২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় তিনগুণ বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও খারাপ হতে দেওয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকলে, বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ এবং যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এখনই আমাদের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য হুমকি হয়ে উঠেছে, এবং ডেঙ্গুর মতো রোগের জন্য এর প্রভাব আরও খারাপ হতে পারে।”
সমাপ্তি: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়া প্রয়োজন
ডেঙ্গুর মতো রোগের বিস্তার ঠেকাতে হলে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত জরুরি। একদিকে যেমন তাপমাত্রার উত্থান ডেঙ্গু ভাইরাসের বিস্তারকে ত্বরান্বিত করছে, অন্যদিকে, যদি সরকার ও বিশ্ব সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তবে আগামীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও ব্যাপক হতে পারে।
আপনার মতামত দিন: ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আপনার কী ধারণা? মন্তব্য করুন এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দিন!