মির্জাপুরে নতুন ইটভাটা: পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশ অমান্য
মির্জাপুরের অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর দিকে নজর দিলে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইতিমধ্যে এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, তবে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, মির্জাপুরে অবস্থিত বেশ কয়েকটি ইটভাটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও বন উজাড় ত্বরান্বিত করছে।
অবৈধ ইটভাটা: কার্যক্রম ও প্রভাব
মির্জাপুরে অবস্থিত ইটভাটাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে। এসব ভাটার মালিকরা আইন এবং বিধিমালা উপেক্ষা করে ইটভাটা স্থাপন করেছেন, যেখানে ২০ থেকে ২৫ একর আবাদি জমি ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে আরবিসি ব্রিকস, এমএসবি ব্রিকস, বাটা ব্রিকস, এইচইউবি ব্রিকস, এবং বিএন্ডবি ব্রিকস ভাটাগুলো রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশের পরিবেশ ছাড়পত্র নেই।
এছাড়াও, ইট পোড়ানোর নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু, মির্জাপুরের বিভিন্ন স্থানে এই আইন না মেনে অপরিকল্পিতভাবে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ এবং কৃষি জমির ক্ষতি হয়ে চলছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন এর জন্য আরো একধাপ বিপদজনক।
আইন লঙ্ঘন এবং পরিবেশের ক্ষতি
মির্জাপুরের মোট ১০৫টি ইটভাটা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ৪৫টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেই। এই অবৈধ ভাটাগুলো পরিবেশের অবনতি ঘটিয়ে বন উজাড় করছে, যার কারণে ভূমির গুণগত মান কমছে, এবং এলাকার জলবায়ু ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। নতুন ৭টি অবৈধ ইটভাটা চালু হওয়ার ফলে, বনের ক্ষতি ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য আরো বিপন্ন হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পদক্ষেপ
পরিবেশ অধিদপ্তরের টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, অবৈধ ইটভাটাগুলোতে অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসনও এই বিষয়ে সচেতন হয়ে অবৈধ ইটভাটা চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেছে। মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.বি.এম আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, শিগগিরই অবৈধ ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষায় পদক্ষেপ প্রয়োজন
পরিবেশ ও বন বিভাগের নির্ধারিত নিয়ম এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য বিশ্বজুড়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবুও, অবৈধ ইটভাটা এবং এর পরিবেশগত ক্ষতি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিস্থিতি আরো খারাপ করতে সহায়ক হতে পারে। এই অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, যেমন বনাঞ্চল ধ্বংস, কৃষিজমির ক্ষতি এবং স্থানীয় জলবায়ু পরিস্থিতির পরিবর্তন।
উপসংহার
মির্জাপুরে অবৈধ ইটভাটাগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে না আনা হলে, পরিবেশের ক্ষতি অব্যাহত থাকবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন আরো তীব্র হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং কৃষি জমি সুরক্ষিত থাকে। তবে, সচেতনতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
আপনি কি মনে করেন অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হওয়া উচিত? মন্তব্যে আপনার মতামত জানিয়ে আমাদের সাথে শেয়ার করুন, এবং যদি আপনি পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হতে চান, নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন!