ডেঙ্গু, আমাদের দেশের জন্য একটি পরিচিত সমস্যা, কিন্তু এখন এটি মৌসুমি রোগের গণ্ডি ছাড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত বর্ষাকালে, যখন বৃষ্টিপাত বেশি হয়, তখন মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয় এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। বাড়ছে ডেঙ্গু
কিন্তু, ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে বৃষ্টিপাত নেই, শীতের আগমন কেবলমাত্র শুরু, তবুও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির পেছনে যে মূল কারণটি দেখা যাচ্ছে তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এর ফলস্বরূপ, মশার বংশবিস্তারের পরিবেশ বদলে যাচ্ছে, যা ডেঙ্গু রোগের বিস্তারকে আরো ত্বরান্বিত করছে।
ডেঙ্গু ও জলবায়ু পরিবর্তন: সম্পর্ক কী?
ডেঙ্গু রোগটি সাধারণত বৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত, কারণ বৃষ্টির পরে পানি জমে গিয়ে মশার লার্ভা বেড়ে ওঠে, এবং সেই পানি থেকেই রোগটি ছড়াতে থাকে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। জলবায়ু পরিবর্তন আবহাওয়া ব্যবস্থাকে বদলে ফেলছে। যেখানে সাধারণত শীতের আগমনী বার্তা দিয়ে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যায়,
সেখানে এবার এমন কিছু জায়গা দেখা যাচ্ছে যেখানে মশা প্রজনন করছে। বহুতল ভবনের পার্কিং স্পেস, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স—এসব জায়গায় জমে থাকা পানি থেকেই মশার লার্ভা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি বোঝাচ্ছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশাদের বংশবিস্তারের পরিবেশও এখন বদলে যাচ্ছে। বাড়ছে ডেঙ্গু
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশে তাপমাত্রা বাড়ছে, আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শুষ্ক মৌসুমেও মশারা বংশবিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারছে। এর ফলে, ডেঙ্গুর প্রকোপ কখনও কমছে না—বরং তা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণ
বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার কথা থাকলেও, নভেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০২৫ সালের নভেম্বরে ২৪,৯৭৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১৪৪ জন মারা গেছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত, আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬,৭৯১ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫৯ জনে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ডেন-২ ভ্যারিয়েন্টটি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াতে অন্যতম কারণ। এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে, বিশেষত যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি আরও মারাত্মক হয়ে উঠছে।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায়: কী করতে হবে?
ডেঙ্গু থেকে বাঁচা আজকাল খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে, কারণ এটি আর শুধু বর্ষাকালের রোগ নয়, বরং পুরো বছর ধরে এর প্রকোপ বাড়ছে। তবে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ রয়েছে যা আমাদের সবাইকে নিতে হবে।
১. বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন
আমরা সবাই জানি, মশা প্রজনন করতে জলজাপানির প্রয়োজন হয়। তাই বাড়ির আঙিনা এবং আশপাশ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো পাত্রে পানি জমে থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করুন, বিশেষ করে ফুলের টব, পাত্র, বালতি, কিংবা পুরনো জিনিস যেখানে পানি জমে থাকতে পারে।
২. জলজ বস্তু পরিত্যাগ করুন
বহুতল ভবন বা নির্মাণাধীন ভবনে, যেখানে পানি জমে থাকে, সেখানে মশার লার্ভা বংশবিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। তাই স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে এইসব স্থানগুলো পরিষ্কার রাখতে তদারকি করতে হবে। আপনি নিজেও সতর্ক থাকুন, বিশেষ করে আপনার বাড়ির মিটার বাক্স বা অপ্রচলিত জলাধারগুলো পরিষ্কার রাখুন।
৩. কীটনাশক ব্যবহার করুন
এডিস মশার বিরুদ্ধে কার্যকর কীটনাশক ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। সেরা উপায় হলো, আপনার বাসাবাড়িতে বা অফিসে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করা এবং মশারি ব্যবহার করা। মশা প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানও ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন তেল, লেবু এবং সিট্রনেলা অয়েল।
৪. স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করুন
ডেঙ্গু থেকে বাঁচার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি। রোগের প্রথম উপসর্গ দেখলেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। দেরি করলে রোগের পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
৫. সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন
মসক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি, সরকারের উচিত জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মশা নিধনে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া। শুধু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নয়, প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে নিজেদের আশপাশ পরিষ্কার রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
উপসংহার
ডেঙ্গু এখন আর শুধু বর্ষাকালের রোগ নয়; জলবায়ু পরিবর্তন এটিকে একটি চলমান সমস্যা তৈরি করেছে। যদি আমরা মশা এবং ভাইরাসের প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিই, তবে ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায়, সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং একসাথে কাজ করতে হবে, তবেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে।
Call-to-Action (CTA): আপনি কি ডেঙ্গু এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত? আমাদের নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে আরও আপডেট, টিপস এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে থাকুন। আমাদের সাথে থাকুন, এবং ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে জয়ী হই!