টিলা কেটে পরিবেশের ক্ষতি
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে লালমাটির টিলা কেটে পরিবেশের ক্ষতির ঘটনা ক্রমেই নিয়মিত একটি চিত্র হয়ে উঠেছে। রাতে এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড়ি টিলা কেটে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। এই মাটি ইট তৈরির জন্য ‘পাহাড়’ আকারে জমা করা হচ্ছে ইটভাটার প্রাঙ্গণে। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
যদিও প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে, তবুও মাটিখেকোরা দিন নয়, বরং রাতের আঁধারে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী ও পরিবেশকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কার্যকর কোনো প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে না।
পরিস্থিতি: লালমাটির টিলা কাটা অব্যাহত
মির্জাপুরে বর্তমানে ১০৫টি ইটভাটা সক্রিয় রয়েছে। ইট তৈরির মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটি সংগ্রহের প্রতিযোগিতা বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি ও পাহাড়ি টিলাগুলো কেটে মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। মাটি কাটা নিয়ে প্রতিবাদ করলে স্থানীয়রা চাপের মুখে পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। ফসলি জমি ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি কৃষি শ্রমিক এবং পাহাড়ি জীববৈচিত্র্যও চরম বিপদে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আজগানা, বাঁশতৈল, গোড়াই, ফতেপুরসহ বিভিন্ন স্থানে এক্সকাভেটর দিয়ে টিলা ও জমি কাটা হচ্ছে। এইভাবে টিলা কেটে সমতলভূমিতে পরিণত করার ফলে এলাকাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
পরিবেশের ওপর প্রভাব
লালমাটির টিলা কাটার ফলে মির্জাপুরের পরিবেশে এক দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে। প্রাকৃতিক টিলা এবং পাহাড়গুলো বৃষ্টি পানি ধারণ করে এবং বন্যার সময় পানি সংরক্ষণে সাহায্য করে। এগুলো ধ্বংস হলে পানির ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং বন্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এছাড়া টিলা কাটা জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় বিপদ। অনেক বন্যপ্রাণী ও গাছপালা এই টিলাগুলোতে বসবাস করে। টিলা ধ্বংস হওয়ার ফলে তাদের বাসস্থান হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়।
পাহাড়ি মাটি কেটে সমতলভূমিতে পরিণত করার ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, যা ফসল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জলবায়ুর ওপর এই ধ্বংসযজ্ঞের প্রভাবও দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
সমাধান: কীভাবে থামানো সম্ভব?
এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমত, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি বাড়ানো জরুরি। মাটি কাটা এলাকাগুলোতে বিশেষ টিম নিয়োগ করা এবং রাতের অভিযান চালিয়ে এই বেআইনি কাজ বন্ধ করা সম্ভব।
দ্বিতীয়ত, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যারা আইন লঙ্ঘন করছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা দরকার।
তৃতীয়ত, ইটভাটাগুলোর জন্য বিকল্প উপকরণ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। মাটির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ব্লক বা অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার ইটভাটার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারে।
এছাড়া, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। জনগণ যদি এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়, তাহলে চাপ সৃষ্টি করা সহজ হবে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা এবং কাটা টিলাগুলোতে গাছ লাগিয়ে পুনরুদ্ধার প্রকল্প শুরু করা উচিত।
পরিবেশ রক্ষায় সবার দায়িত্ব
লালমাটির টিলা কাটা শুধু একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি পুরো পরিবেশের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। টিলা ও পাহাড় কেটে শুধু মাটি নয়, আমাদের ভবিষ্যৎও কেটে ফেলা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় কেবল প্রশাসনের নয়, স্থানীয় জনগণেরও ভূমিকা থাকতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে।
আপনার কী মনে হয়, এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে আমরা আর কী করতে পারি? মতামত জানান এবং সচেতনতার বার্তাটি ছড়িয়ে দিন। 🌍