বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করা ঘূর্ণিঝড় ‘ফিনজাল’ এখন উত্তরপশ্চিম দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সাগরের অবস্থা ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই বেড়ে চলেছে, এবং এটির শক্তি বাড়ানো এই বাস্তবতাকেই আরও স্পষ্ট করে তোলে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফিনজাল’ কোথায় এখন?
শনিবার সকালে, ঘূর্ণিঝড় ফিনজাল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। এটি উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে ভারতীয় তামিলনাডু উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এর কেন্দ্রের চারপাশে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
এর প্রভাব: সাগর উত্তাল, মাছ ধরার নৌকাগুলোকে সাবধানে চলাচল করার নির্দেশ
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগরের পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তাল হয়ে উঠেছে, যা সেখানকার স্থানীয় জনগণের জন্য বিপদজনক হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখানো হয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের মাছধরা নৌকা ও ট্রলারগুলোকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন: ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়াচ্ছে
এটি একদিকে যেমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃত প্রভাবকেও দেখায়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ানোর ফলে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বাড়ছে এবং তাদের অগ্রসর হওয়ার গতি আরও দ্রুত হচ্ছে। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের মতো এলাকায়, যেখানে ক্রমাগত ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব প্রতিনিয়ত অনুভূত হচ্ছে।
অর্থাৎ, জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশের উপর নয়, মানুষের জীবনযাত্রার উপরও বিপজ্জনক প্রভাব ফেলছে। ক্রমাগত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভাঙা — সবই এর স্পষ্ট উদাহরণ।
কি করতে হবে?
যারা উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করেন, তাদের জন্য এটা একটি সতর্ক সংকেত। আবহাওয়া দপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলা, নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান এবং মাছধরা নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূল থেকে দূরে রাখা জরুরি। সবার উচিত, ঘূর্ণিঝড় এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়ে খোঁজখবর রাখা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই প্রস্তুতি নেওয়া।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফিনজাল’ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন শুধু একটি বৈজ্ঞানিক বিষয় নয়, এটি আমাদের প্রতিদিনের জীবনকেও প্রভাবিত করছে। সাগরের উত্তাল অবস্থার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়ানো জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা আমাদের সকলের সামনে তুলে ধরছে। তাই, আমাদের সবার উচিত এখন থেকেই সতর্ক হওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত থাকা।
নিজেকে নিরাপদ রাখতে প্রস্তুতি নিন এবং ঘূর্ণিঝড়ের আপডেট রাখুন।